🖋 গোলাম কবির
” এখন ভালবাসা “
এখন ভালবাসা ভালবাসা বলে
যতোই চেঁচাও না কেনো ভালবাসা
আর পাবেনা কোথাও।
এখন মানুষের জীবন থেকে ভালবাসা
হারিয়ে গেছে, মানুষের এখন সময় কম
ভালবাসার, ভালবেসে কাউকে চিঠি আর
লিখেনা কেউ, এখন এসেছে অনুভুতি
প্রকাশের জন্য ইমুজি, বেড়েছে মুঠোফোনে
এসএমএস আরো কতো কী। রঙিন খামের
ভিতরে প্রেমপত্র কেউ আর লিখেনা, এখন
ডাকবাক্স খালি পড়ে থাকে অবহেলায়।
রঙিন সুতোয় এখন কেউ বুনেনা
ভালবাসার আবেগে ভরা কথামালা।
এখন কারো সাথে দেখা করার জন্য
গলির মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকেনা কেউ
বেকুবের মতো ঘণ্টার পর ঘণ্টা
এবং দেরি করে আসার জন্য
অভিমানে কেউ গাল ফোলায় না।
ওসব এখন সাবেকী ভালবাসার ধরণ
বলে উপহাস্য কারো কারো কাছে।
এখন এসেছে মোবাইলে ভিডিওকলের যুগ,
এখন ভালবাসা বড়ো বেশি যান্ত্রিক
আর সহজলভ্য বিষয় যেনো,
এখানে এখন ভালবাসা যেনো শুধুই
শরীরের খেলায় মেতে বেসামাল যুগের হাওয়ায় কচুরিপানার মতো নিরুদ্দেশ ভেসে চলা।
.
.
.
.
” ভালবাসা ও প্রেম “
আচ্ছা, প্রেম আর ভালবাসা কি একই!
লোকে তো গুলিয়ে ফেলে কোনটা প্রেম
আর কোনটা যে ভালবাসা বুঝে উঠতে।
আমার চোখে ভালবাসায় রূপে একটা
মোহান্ধতা থাকে, থাকে তীব্র কামনা বাসনা,
কোনোরকম ভয়ডরহীন ভাবে পাগলের
মতো যুক্তিতর্কের ঊর্ধে ভালবাসা,
পাওয়া না পাওয়ার হিসেব ষোলআনা
এবং এটা শুধুই হতে পারে
একজন পুরুষের সাথে একজন রমণীর।
আর প্রেম? এটা সার্বজনীন।
এটা হয় একজন বান্দা বা বান্দীর সাথে
তার মাওলার বা সৃষ্টিকর্তার।
এখানে বান্দা বা বান্দী তার মাওলাকে
অর্থাৎ স্রষ্টাকে না দেখেই তারই ভয় ও
ভালবাসায় আকুল হয়, চোখে নামে
অবিশ্রান্ত শ্রাবণের ঢল,
অনেকসময় এক্ষেত্রে আহার নিদ্রার
কোনো খবর থাকে না এবং কখনো
সে আত্মভোলা হয়ে যায়।
এখানে পাওয়া না পাওয়ার
কোনো হিসেব রাখে না বান্দা বা বান্দী,
শুধুই তাঁর দয়া ও অপার ক্ষমা পেয়েই
হয় জীবন ধন্য, জাগতিক
কোনো কামনা বাসনা এখানে থাকে না।
.
.
.
.
” ভালবাসা হারিয়ে গেলে “
ভালবাসা হারিয়ে গেলে
পড়ে থাকে স্মৃতির দহন।
ভালবাসা হারিয়ে গেলে
অনিদ্রার রাত গুলো দীর্ঘ হতে হতে
পৃথিবীর দীর্ঘতম নদীকেও ছাড়িয়ে যায়।
ভালবাসা হারিয়ে গেলে
সুখ গুলো সরে গিয়ে দুঃখ গুলো
অন্ধকারেও চিক চিক করতে থাকে
রোদের ওপর চকচকে বালির মতো।
ভালবাসা হারিয়ে গেলে
অবিশ্বাস ও ঘৃণার কুয়াশায় ঢেকে যায় সময়।
ভালবাসা হারিয়ে গেলে
জীবনকে পাকা ধান কেটে নেয়ার পর
পড়ে থাকা খড়কুটোর মতো মূল্যহীন মনেহয়।
ভালবাসা হারিয়ে গেলে
অতীতের টুকরো টুকরো আনন্দঘন মূহুর্ত গুলো
যাদুঘরে রাখা প্রাচীন তৈজসপত্রের
মতোই ভীষণ মূল্যবান মনেহয়।
ভালবাসা হারিয়ে গেলে
মানুষের জীবনের আর কি কোনো দাম থাকে?
.
.
.
.
.
” অনুভবে,তুমি “
তুমি আসলেই বুকের ভিতর
হাজার তারের বীণা বেজে ওঠে,
চলে গেলে এটা হয়ে যায় ভয়াল ঘুর্ণিঝড়ে
ছিন্নভিন্ন লোকালয়ের মতো এলোমেলো।
তুমি আসলেই হেমন্তের পাতাঝরা দিনেও
হৃদয় ঝলমল করে ওঠে এবং কৃষ্ণচূড়ার
লালে লাল আগুনে ঝলসে যায়।
তুমি আসলে কাছে কথার ফুলঝুরিতে
উপচে পড়ে মায়ানদীর জল হৃদয় ভাসিয়ে,
চলে গেলেই শোকের লোবান গন্ধ
হৃদয়কে বিষাদের গাঢ় মেঘে ঢেকে ফেলে।
তুমি কাছে আসলে সময় গুলো
আরবীয় ঘোড়ার মতো দ্রুত দৌড়ায়,
চলে গেলে এক একটা সেকেন্ডকে
মনেহয় এক একটা দিন এবং
সারাবেলা কেটে যায় কারফিউয়ের
দিনের মতো ঘোর অনিশ্চয়তায়।
তুমি কাছে থাকলে কতো যে অর্থহীন
এলোমেলো কথা কবিতা ও গান হয়ে যায়
অথচ চলে গেলে সমস্ত কথা গুলো
থেমে গিয়ে শোকার্ত শূন্যতা নেমে আসে।
তুমি আসলে আমার ভিতরে স্টেডিয়ামের
ফ্লাডলাইট জ্বলে ওঠে আনন্দে অথচ
চলে যাও যখন প্রজ্বলিত অগ্নিকুন্ডের মতো
অসহায় এবং একাকী জ্বলতে থাকি এই আমি।
.
.
.
.
.
” অনুরোধ “
কতোবার তোমায় বলেছি,
তুমি চলে গেলে বুকের ভিতরে
রাতের শেষ মেলট্রেন চলে যাবার পর
খাঁখাঁ স্টেশনের প্লাটফরমের শূন্যতা
বিরাজ করে, তখন মনেহয় ঢং ঢং করে
একটানা স্কুলের ছুটির ঘণ্টা বাজার মতো
জীবনেরও ছুটির ঘণ্টা বাজতে থাকে!
হৃদয়ে আমার তখন কোনো এক
প্রাচীনকালের মৃত নদীর বুকে লাঙলের
ফলায় উঠে আসা কালো পলিমাটির
দুঃখরা হু হু করে কান্না করতে থাকে এবং
পুরাতন আরব্যোপন্যাসের গল্পের
প্রতিনায়কের বিকট অট্টহাসিতে শূন্যতা
খানখান করে ভেঙে গিয়ে একধরণের
আধিভৌতিক অবস্থার সৃষ্টি হয় ;
তাই শুধুই অনুরোধ করি
এভাবে চলে যেও না ফেলে একা!
.
.
.
.
.
” চোখে যদি চোখ পড়েই গেলো “
চোখে যদি চোখ পড়েই গেলো
তবে ফিরিয়ে নিও না আর।
না হয় সন্ধ্যা হয়েই গেলো আজ!
হয়তো জোনাকিরা কাছে এসে
করবে ভীড় আমাদের থেমে যাওয়া
চোখের পলকহীন তাকিয়ে থাকা দেখতে,
হয়তোবা তখন চাঁদও তোমায় দেখে
লজ্জা ভেঙে হেসে উঠবে খিলখিল !
চোখে যদি চোখ পড়েই গেলো আজ
তবে ফিরিয়ে নিও না যেনো,
না হয় গুরুজনে দেখেই ফেললো!
তোমার অমন অপলক চেয়ে থাকা দেখে
হয়তো অমল ধবল জ্যোৎস্না নেমে
আসতে পারে নদীর বুকে, তখন নৌকায়
শুয়ে থেকে জলের ফিসফিস করে
কথা বলা ঢেউ গুলোকে দেখে
মাঝির হয়তোবা তার বৌয়ের কথা
মনে পড়ে বিরহিত হৃদয়ের দু’ফোঁটা জল
গড়িয়ে পড়তে পারে গাল বেয়ে।
চোখে যদি চোখ পড়েই গেলো আজ,
তবে ফিরিয়ে নিও না, তোমার ঐ হারপুনে
বিঁধে যাওয়া আমার হৃদয় জ্বলতে
থাকুক অবিরাম ফুজিয়ামার মতো!
তোমার অমন সুন্দর চেয়ে থাকায়
আজ না হয় শেয়ারবাজারে আগুন
লেগে যাক দাউদাউ করে, মূল্যবৃদ্ধির
এই ভাইরাস ছড়িয়ে যাক মানুষের
পারষ্পরিক সম্পর্কের সবখানে,
ভালবাসার তীব্র স্রোতে ভেসে যাক
আজ পৃথিবীর সমস্ত মারণাস্ত্রগুলো,
সেসব না হয় আজ হয়ে যাক
পুকুরে কিলবিল করতে থাকা পোনা মাছ!