ভ্রমণ গল্প – ট্রেন ভ্রমণের অভিজ্ঞতা

ভ্রমণ গল্প - ট্রেন ভ্রমণের অভিজ্ঞতা

এম এ হালিম

ছোট্ট বেলা থেকেই শামসুর রহমানের ‘ট্রেনের বাড়ি কই’ কবিতাটি পড়েই যেনো ট্রেন গাড়ির সঙ্গে আমাদের দেশের  অনেক শিশুর পরিচয়। তবে অনেকই বাস্তবে ট্রেন সম্পর্কে ছোট্ট বেলায় অল্পই জেনে থাকে।কারণ আমাদের দেশে ট্রেন লাইন খুবই বিরল। আমাদের এলাকা থেকে রেললাইন ষাট সত্তর কিলোমিটার  দূরে অবস্থিত। যার কারণে সে রকম আমারও পরিচয় ছিল না। তবে ছোট্ট বেলায়  হাট লক্ষীপুর বড় খালার বাড়িতে গিয়ে প্রথম ট্রেন দেখেছিলাম।।তাদের বাড়ির পাশদিয়ে উত্তর  দক্ষিণ কোণে বেঁকে গেছে রেললাইন। যখন ট্রেন পবন গতিতে হুইসিল দিয়ে  আসে তখন আমিও বিদ্যুৎ বেগে দৌড়িয়ে যেতাম। তখন মনের মধ্যে কি ধরনের হর্ষের সৃষ্টি হয়েছিল,তা অনেকটাই আজ ভুলে গেছি।তবে সে অনুভূতি আজো একটু করে অনুভব হয়।

ধীরে ধীরে বড় হলাম।ট্রেন সম্পর্কে অনেক কিছু পড়লাম, জানলাম।তবে ভ্রমনের ইচ্ছে অপূর্ণই রয়ে গেলো। যখন আমি সপ্তম বা  অষ্টম শ্রেণিতে পড়ি।তখন প্রথম কমলাপুর রেলস্টেশন ভ্রমণে গিয়েছিলাম। তবে ট্রেনে ভ্রমণ করতে পারিনি।শুধু স্টেশনের প্লাট ফর্মে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেনের একবগি থেকে অন্য বগিতে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখেছিলাম।তারপর অনেক বার ইচ্ছে ছিল ভ্রমণ করার।তবে  তেমন সুযোগ আর হয়ে উঠেনি।

রংপুরে যখন এইচএসসি পড়ি।তখন আমরা তিন বন্ধু ভাবতাম ট্রেনে করে একদিন বাড়ি যাব ।আমরা তিন বন্ধু পাশাপাশি গ্রাম থেকে রংপুরে এক সঙ্গে ভর্তি হয়েছিলাম। আমাদের অনেক বার ভ্রমনের ইচ্ছে থাকলেও কেনো জানি অপূর্ণই রয়ে গেলো।এইচএসসি শেষ। রেজাল্ট হলো।আমরা রংপুরেই আছি।কিন্তু ইচ্ছে অপূর্ণই রয়ে গেলো।ভার্সিটির ভর্তির সময় ঘনিয়ে এলো।  আমরা ভর্তি পরীক্ষা ফর্ম তুললাম। ইচ্ছে ছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার সময় ট্রেনে যাবো বা ঢাকা থেকে বাড়িতে ট্রেনে আসব।কিন্তু খ ইউনিটের পরীক্ষা দিলাম।তবুও ইচ্ছে অপূর্ণ রয়ে গেলো।বাসার সকলের কথা মতো বাস ভ্রমনে পরীক্ষা দিলাম।তখন ভাবলাম  ঘ ইউনিটের পরীক্ষায় ট্রেন ভ্রমণ কোনো ভাবেই মিস করা যাবে না।কিন্তু নানা সমস্যার কারণে তিন বন্ধু এবার এক সঙ্গে ঢাকায় যেতে পারলাম না।তিন জন আলাদা বাসে গেলাম।তবে তিন জন এক সঙ্গে  ঢাকায় আমার বড় দুলাভাইয়ের বাসায় উঠলাম।পরদিন সকালে পরীক্ষা হবে।সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি বৃষ্টির চলছে ধুম। আমরা বনশ্রী এলাকাতে ছিলাম।তার পাশ থেকে কিছু গাড়ি সরাসরি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যায়।আমরা সকালে নাস্তা খেয়ে তেমনি একটা গাড়িতে গিয়ে তিনজন উঠে পরলাম।গাড়ি চলছে।চারদিকে বৃষ্টি ঝরছে।চলতে চলতে  নামার সময় ঘনিয়ে এলো।আমরা শাহবাগ মোড়ে নেমে হেটে হেটে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঝে প্রবেশ করলাম।পরীক্ষা দিলাম।বাসায় আসলাম।বৃষ্টি তখন একটু একটু চলছিল।যার কারণে প্রবল ইচ্ছে থাকা সত্বেও  সেদিন আর আমাদের রাজশাহীর উদ্দেশ্য  রওনা দেয়া হলো না।পরদিন সারা দিন কেটে রাতে বের হলাম।

টঙ্গি বাস ইস্টিশন পৌছাল।পরদিন আমাদের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে  পরীক্ষা আছে। সকালে ১১:৩০ মিনিটে আমার পরীক্ষা এবং বাকি দুই বন্ধুর বেলা তিনটায়।তাই ওদের থেকে টেনশন আমার একটু অটোমেটিক বেশি।তাও পূর্বে কখনো রাজশাহীতে যাওয়া হয়নি।কতো সময় লাগে।পৌছাতে পারব কিনা রাতে।নানা টেনশন মাথায় চেপেছিল।তবে আমার মনে হয়, বাংলাদেশের বেশি ভাগ শিক্ষার্থী এই ভর্তি পরীক্ষার সময় একা একা সবচেরে বেশি সফর করে থাকে এবং নানান ধরনের টেনশনে ভোগে।যা অন্য সময়ের চেয়ে চারগুন বেশি হবে।আমার ও বন্ধুদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বললাম। যেটা বলছিলাম,টঙ্গী বাস ইস্টিশনে হাজির হলাম।রাজশাহীতে যাওয়ার অনেক গাড়ি এখানে পাওয়া যায়।তাই টিকেট নিয়ে পূর্বে থেকেই চিন্তা ছিলো না।তবে যখন পৌছালাম,প্রতিটি কাউন্টার তন্য তন্য করে খুঁজলাম। তবুও টিকেট পেলাম না।তখন মনের মধ্যে টেনশন মাত্রা আরো কয়েক গুনে বৃদ্ধি পেয়ে গেলো।অবশেষে ঘুরতে ঘুরতে এক কাউন্টারে  ইঞ্জিন কভারে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়ে গেলো।ভাড়া পাঁচশত করে দিতে হবে।অথচ সীটে ভাড়া যেখানে তিনশত পঞ্চাশ।উপায় না পেয়ে আমরা রাজি হয়ে গেলাম।হঠাৎ মনে পড়ল।আমার কিছু বন্ধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা দিয়ে সেই রাতেই রাজশাহীর উদ্দেশ্য রওয়ানা দিয়েছে।ওদের সঙ্গে ফোনে কথা হলো।জানতে পারলাম।ওরা এখনো মাঝপথে  রয়েছে।রাস্তায় প্রচুর জ্যাম এবং সঙ্গে সঙ্গে বললো তোরা যদি বাসে আছিস।তাহলে কাল সকালে পরীক্ষা দিতে পারবি  না।আমাদের মাথায় যেনো আকাশ ভেঙ্গে পড়ল।স্বপ্নের ভার্সিটিতে কি তাহলে পরীক্ষা দিতে পারব না।মনের মধ্যে নানা কল্পনা তৈরী হলো।আমি হাবিব ভাইকে ফোন দিলাম।আমার আপন বড় ভাই।ভাই বললো তোরা এক কাজ কর।ওখান থেকে বিমান বন্দর রেলস্টেশন আয়।এখানে আসলে অনেক ট্রেন পাবি।ভাইকে বললাম,আমরা কেউ তো কখনো ট্রেন ভ্রমণ করেনি।তুমি আসলে…ভালো হতো।ভাই বললো চিন্তার  কোনো কারণ নেই। ওখানে ঢুকতেই টিকেট কাউন্টার পাবি।ওখান থেকে টিকেট কেটে নিবি।কোনো সমস্যা হবে না।তাছাড়াও আমার এই মেরুল বাড্ডা থেকে এই জ্যামের মধ্যে  যেতে অনেক সময় লাগবে।এখন প্রায় রাত দশটা বাজে।তোরা তারাতাড়ি যা, তাছাড়া ট্রেন মিস করবি।বাস টিকেট কাউন্টার ম্যানকে বুঝে বলে বিমান বন্দরের উদ্দেশ্য রওনা দিলাম।আমরা নেমে স্টেশনের ভিতরে ঢুকতেই চোখে পড়ল।সবুজ রঙ্গে লেখা টিকেট কাউন্টারের উপরে বিভিন্ন জেলার ট্রেনের নাম ও ছাড়ার সময়।সঙ্গে চোখে পড়ল,ব্যাগ ঘারে শতশত স্টুডেন্ট টিকেট লাইনে দাঁড়িয়ে আছে।বুঝতে আর বাকি রইল না,তারাও আমাদের মত পরীক্ষার্থী। আমরাও তাদের পিছনে বিনা বাক্য দাঁড়িয়ে গেলাম।অল্প কিছুক্ষণ পরে জানতে পারলাম।টিকেট কাটলেও সীট পাওয়া যাবে না।দাঁড়িয়ে যেতে হবে।তখন তিনজন ভাবলাম।তাহলে টিকেট কেটে লাভ কি?চলো টিকেট ছাড়াই উঠব।আমাদের সঙ্গে যোগ দিলেন ময়মনসিংহের এক স্টুডেন্ট ভাই।ট্রেন স্টেশনেই পরিচয় হয়েছিলাম।নামটা আজ ভুলে গেছি।অনেক সুন্দর মনের মানুষ ছিলেন।অনেক কথা গল্প করলাম। যে কথা বলতে ছিলাম, টিকেট ছাড়াই ট্রেনে উঠব।ট্রেন ছাড়বে এগারোটায়।মনে তখন অনেকটা স্বস্তি ছিল।বন্ধুর সঙ্গে কথা বলে মনের মধ্যে যেমন উত্তেজনা ছিলো।তা নেই বললেই চলে।তখন ভেবেছিলাম আমাদের মত শতশত স্টুডেন্ট দাঁড়িয়ে ।তাড়া যদি পরীক্ষা দিতে পারে আমরাও পারব।এ রকম নানা গল্পে কখন জানি ১১:৩০ বেজে গেছে বলতেই পারছি না।কিন্তু এগারোটার ট্রেন এখনে স্টেশনে পৌছায় নি।এর মধ্যে নাকি স্টেশন মাস্টার বলছে,ট্রেন আসতে লেট হবে।ট্রেন রাজশাহী থেকে আসছে।আমি গল্পের মাঝে ততটা বুঝতে পারিনি।অবশেষে ১২:২০ এ ট্রেন স্টেশন এলো।ইস্টিশন মাস্টার মাইকে বলে দিলেন।যারা এখান থেকে কমলাপুর ফ্রি ভ্রমণ করেতে ইচ্ছুক,তারা করতে পারেন।এই ট্রেনটিই আবার রাজশাহীতে চলে যাবে।তখন আমরা তিন বন্ধু রাকিব, লিখন ও আমি এবং সেই ছেলেটি গিয়ে উঠলাম এবং আমাদের মতো অনেকই উঠে পড়ল।ট্রেন যখন কমলাপুর রেলস্টেশনে পৌছাল। তখন দেখতে পেলাম আমাদের মতো হাজারো স্টুডেন্ট দাঁড়িয়ে আছে।ট্রেনে থামার সঙ্গে সঙ্গে, যে পাশে পারে সকলে উঠে যাচ্ছে। আমরা বিমান বন্দর স্টেশনে উঠর জন্য তেমন কোনো কষ্ট পেতে হয়নি।তবে তখন না উঠলে পরে উঠতে পারতাম কি না? জানি না।কমলাপুর ট্রেনটা প্রায় চল্লিশ মিনিট ছিল।মনে হয় একমুহূর্তের জন্যে ট্রেনে উঠার ভীড় কমেনি।সেদিন অনেক মেয়েকেও দেখিছি।তারা কতো কষ্টে ট্রেনের জানালা দিয়ে প্রবেশ করেছে।ট্রেন কানায় কানায় কমলাপুর রেলস্টেশনে পুর্ণ হয়ে গেলো।যেনো সুই ফেলানোর জায়গা নেই।আমরা হরদম বসে আছি সীটে।সীট মালিকের খোঁজ নেই।বলতে বলতে ট্রেন এবার রাজশাহীর উদ্দেশ্য রওনা দিলো।আমাদের চারপাশে না হলেও পঞ্চাশ জন দাঁড়িয়ে  ছিল।অবিশ্বাস্য হলেও সত্য।কোনো কোনো ছেলে-মেয়ে উপরে ব্যাগ রাখার জায়গেতেও বসেছিল।আসলে মানুষের স্বপ্ন কী জিনস!শুধু স্বপ্ন পূরণের জন্য কতো কষ্ট-যন্ত্রণা  সহ্য করে। কতো স্টুডেন্ট সেদিন  দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এসেছিল।তাদের অনেকে বাবার হয়ত প্রাইভেট কার ছিল।কিন্তু সব বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে রাস্তার জ্যাম।ট্রেন চলতে চলতে  বিমান বন্দর  ইস্টিশন পৌঁছে গেলো।এখানে আরো শতশত যাত্রী উঠে পরল।নিত্য দিনের যাত্রীর চেয়ে,হয়ত  কয়েকগুন বেশি ছিল।আমার জানা নেই।আমরা দিব্যি সীটে বসে আছি।টিকেট ছাড়া সীটে।সীটের মালিক নিখোঁজ। আবারো ট্রেন চলতে শুরু করলো।এক এক করে কয়েকটি ইস্টিশন থামলো আর চললো।তবে যে রকম বইতে পড়েছিলাম।ট্রেন চলছে সারি সারি গাছ , মাঠ, গোরু মানব সবাই পিছনে দৌড়াচ্ছে। সে অনুভূতি একটু জাগ্রত হলো না।রাতের অন্ধকারে ট্রেন চলছ।চারদিকে শুধু আঁধারে আচ্ছন্ন। আমরা দিব্যি বসে আছি টিকেট ছাড়া সীটে।ভাগ্যের কি পরিহাস!কেউ টিকেট কেটে দাঁড়িয়ে আছে।অথচ আমরা টিকেট ছাড়াও বসে আছি।এরকম নানা কথা ভাবতে  ভাবতেই টাঙ্গাইল  চলে আসলাম।সঙ্গে আমাদের সীটের মালিকেরাও হাজির।টিকেট দেখানোর পর সীট ছেড়ে দিলাম।তিনজন মেয়ে ছিল।তারাও স্টুডেন্ট। উঠে দাঁড়ালাম। দাঁড়ানোর মতো জায়গা নেই।তারপর আবার চারদিকে শুধু মেয়ে আর মেয়ে। মাঝখানে কয়েকটা আমরা ছেলে।মেয়ে গুলো সীট পেয়ে যেনো স্বস্তির একট শ্বাস ছাড়লো।তারা নাকি কমলাপুর রেলস্টেশনে উঠেছেন।এই জ্যামে খুঁজে বের করতে পারেননি। ট্রেন ঝনঝনা ঝন শব্দ করে চলতে শুরু করল একের পর এক ইস্টিশন অতিক্রম করে চলছে,।যমুনা ব্রীজে পূর্ব পাশে একটু বিলম্ব হয়েছিল।তারপর আবার চলতে শুরু করল।যেখানে যমুনা ব্রীজ বাসে অতিক্রম করতে পাঁচ থেকে দশ মিনিট লাগে।সেখানে ট্রেন অত্যন্ত ধীর গতিতে চলেছে। পাক্কা সতের মিনিট লেগেছিল।তারপর আবারো ট্রেন হরদম চলতে লাগলো ঝনঝনা ঝন শব্দ করে।চলতে চলতে ফজরের আজান চারদিক থেকে ভেসে আসছিল।আমরা নির্ঘুম দাঁড়িয়ে আছি।মনের মাঝে একটা অস্বস্তি কাজ করছে।আর কতো দাঁড়িয়ে থাকি।ধীরে ধীরে একটু একটু করে পুর্বাকাশে অরুণ লাল আভা ছড়িয়ে দিল।যেনে পৃথিবীর সেরা সৌন্দর্য তখন জেগে উঠল।মনের মাঝে অন্য রকম তৃপ্তি পেলাম।মহুর্তে ভুলে গেলাম।নির্ঘুম রাতের দাঁড়িয়ে থাকার কষ্ট-অস্বস্তির কর মুহুর্ত।একটু পরের দেখতে পেলাম কাঙ্ক্ষিত ইচ্ছে গুলো।যে গুলো পুস্তকে চুকিয়েছিলা।মানুষ, গোরু,  হাস, খাল-বিল গাছ গুলো যেন বিদ্যুৎ গতিতে পিছনের দিকে ছুটছে।মনের মাঝে অন্য রকম হর্ষের সৃষ্টি হচ্ছে।আমি ধীরে ধীরে হারিয়ে গেলাম সেই সৌন্দর্যের মাঝে।প্রথমবার কোনো জিনিস উপভোগ করতে যে কেমন মজা লাগে।তা কখনো ভাষা প্রকাশ করা সম্ভব নয়।আমার ঠিক তেমনি হয়েছে।আমার সে সৌন্দর্য মনের মাঝে এখন গেঁথে আছে। একটু একটু করে বেলা বাড়তে লাগল।ধীরে ধীরে আমাদের যেনো এই মনোমুগ্ধকর মুহূর্তের আয় ফুরিয়ে আসছে।চলতে চলতে ট্রেন রাজশাহী ইস্টিশন হাজির হয়ে গেলো।আমরা ট্রেনে থেকে নেমে পড়লাম।গুটিগুটি পায়ে চলছি,চলে যাবো বাহিরে। যেতেই দেখি কিছু আনছার গেটে টিকেট চেক করছে।আমরা দাঁড়িয়ে গেলাম।ধীরে ধীরে পিছন ফিরতে লাগলাম।এক আনছার  ডেকে বললো,তোমাদের  টিকেট কই  দেখি। আমরা বললাম, টিকেট তো ট্রেন থেকে নেমে ওখানে ফেলে দিয়েছি।তারা বলল তাহলে তিনশো করে টাকা দিতে হবে। আমরা বললাম আমরা ওখানেই ফেলে দিয়েছি,হাতে ইশারা করলাম।যাবো আর আনবো।বলে পিছনে ফিরলাম।আর আনছারের সঙ্গে দেখা নয়।আমরা পিছনের একটা খোলা পথ ধরে চলতে থাকলাম।  একটু পরে দেখি ইস্টিশনের সম্মুখে হাজির হয়ে গেলাম।তারপর অটো গাড়িতে করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছে দেখি ৯টা বেজে ত্রিশ।আর হ্যাঁ দূরসম্পর্কের এক মামা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়াউর রহমান হলে থাকত।সেখানেই উঠেছিলাম।আমার জীবনের এই প্রথম ট্রেনে ভ্রমণে যেমন ছিলো নির্ঘুম রাত্রি দাঁড়িয়ে থাকার নাটকীয় কাহিনী ,তেমনি নানা ধরনের আনন্দ উল্লাসের অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়েছিল।জীবনের প্রথম ট্রেন ভ্রমণে টিকেট ছাড়া করেছিলাম।যদিও এটা বাংলাদেশ রেলের আইন অনুযায়ী অবৈধ ভ্রমণ।আপনার কিন্তু ট্রেন ভ্রমণে অবশ্যই  টিকেট কাটবেন।এট অমান্য করা দণ্ডনীয় অপরাধ।তবে আমার ইচ্ছে আছে। ভবিষ্যতে যদি দেয়ার সুযোগ থাকে।তবে আমি দিয়ে দিব।সেই যে প্রথম ট্রেন ভ্রমণ করলাম।তারপর আর এক জেলা থেকে অন্য জেলায় ভ্রমণ করতে পারলাম না।

তবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে পারায়।  নিত্য শহর থেকে ক্যাম্পাস ভ্রমণ করি।যেখানে ট্রেনের ঝনঝান শব্দের তালে ভ্রমণ করার জন্য পাগল ছিলাম।সে ট্রেনের ঝনঝনা শব্দ এখন অনেক সময় অস্বস্তির সৃষ্টি করে।এই যে স্বস্তির মাঝেও অস্বস্তি।এটা কিন্তু আকাশ থেকে উড়ে আসেনি।এর জন্য যেমন ছিল প্রবল ইচ্ছে তেমনি কঠোর পরিশ্রম এবং মহান রাব্বুল আলামিনের অশেষ মেহেরবান।আর একটু কথা নির্ঘুম রাত্রি  থাকার পরেও কিন্তু পরীক্ষা দিয়ে রাজশাহীতে আল্লাহর রহমতে মেরিট লিস্টে ছিলাম।তবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজাল্ট আগে বের হয়েছিল  এবং সঙ্গে সঙ্গে  এখানো ভর্তি হয়ে যাই।এখানো ভর্তির পর রাজশাহীর রেজাল্ট এসেছে।তখন আবার কি করব নানা টেনশন পরে গেলো। অবশেষ,সবকিছু চুকিয়ে চট্টগ্রামে রয়ে গেলাম।

“বিনা অনুমতিতে এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা কপি করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। কেউ যদি অনুমতি ছাড়া লেখা কপি করে ফেসবুক কিংবা অন্য কোন প্লাটফর্মে প্রকাশ করেন, এবং সেই লেখা নিজের বলে চালিয়ে দেন তাহলে সেই ব্যাক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য থাকবে
ছাইলিপি ম্যাগাজিন।”

সম্পর্কিত বিভাগ

পোস্টটি শেয়ার করুন

Facebook
WhatsApp
Telegram
রহমতুল্লাহ লিখন এর তিনটি কবিতা

রহমতুল্লাহ লিখন এর তিনটি কবিতা

রহমতুল্লাহ লিখন    এক এখন আমার কঠিন তরল বায়বীয় লক্ষ্য ১ আমি আনন্দিত বিমোহিত, আপনার পা চেটে চরম পুলকিত। জীবন এখন স্বার্থক শোভিত,  দয়া করে ...
বই পর্যালোচনা- আগুনের পরশমণি- হুমায়ূন আহমেদ

বই পর্যালোচনা- আগুনের পরশমণি- হুমায়ূন আহমেদ

বইঃ আগুনের পরশমণি লেখকঃ হুমায়ূন আহমেদ বইয়ের ধরনঃ উপন্যাস প্রকাশনীঃ হাতেখড়ি প্রকাশকঃ মো: আবু মুসা সরকার প্রচ্ছদ ও অলংকরণঃ সমর মজুমদার পৃষ্ঠাঃ ৮৪ মুদ্রিত মূল্যঃ ৭০ টাকা ...
ছাইলিপি ই-শারদ সংখ্যা-২০২০

ছাইলিপি ই-শারদ সংখ্যা-২০২০

প্রিয় পাঠক, শারদীয়ার শুভেচ্ছা গ্রহন করুন! আশাকরি বিশ্বের এই খারাপ পরিস্থিতি আপনি এবং আপনার পরিবারের সবাই ভালো আছেন কিংবা ভালো থাকার চেষ্টা করছেন।  এসেছে শারদোৎসব। ...
অণুগল্প- হাত / অমিতা মজুমদার 

অণুগল্প- হাত / অমিতা মজুমদার 

  । অমিতা মজুমদার    বিলটু আর বলাই  ছুটির  দিনের  ভরদুপুরে ব্যতিব্যস্ত হয়ে হেঁটে যাচ্ছে। পথে করিম মোল্লার সাথে দেখা,জানতে চাইলেন কোথায় যাচ্ছে। বিলটুর সরল উত্তর ...
অপার্থিব পত্রমিতালী

অপার্থিব পত্রমিতালী

রাহাত আহম্মেদ বিকেল বেলা ছাদে বসে পাখিদের ঘরে ফিরা দেখতে বড্ড বেশি ভালো লাগে। ভালো লাগে কিচিরমিচির শব্দ আরো বেশি ভালো লাগে তাদের সারিবদ্ধভাবে ঘরে ...