আশিক মাহমুদ রিয়াদ
সেদিনের কথা বলি, ঠিক সেদিনের কথা!
সেদিন কি তুমি আমার চোখে চোখ রাখবে?
না না ঠিক সেদিনই না, যেদিন বসন্ত আসবে!
যেদিন শুকনো মলাটের গায়ে ঝরা পাতা উড়বে!
স্নিগ্ধ ফাগুনের শীতল বাতাসে।
অথবা ঠিক সেদিনের কথা, যেদিন গজাবে –
গাছে গাছে নতুন পাতা কুড়ি,
রাস্তার ধার বেয়ে পলাশের ফুলঝুড়ি!
সেদিনের কথা বলি, ঠিক সেদিনের কথা।
তুমি কি আমার হাতে হাত রাখবে?
যেদিন ঘুঘু ডাকা ভোরে সকাল হবে।
মলিন পৃষ্ঠাগুলো সাজবে নতুন লেখায়,
তৈরী হবে তোমার আমার গল্প।
কোন রঙিন কাগুজে নৌকায়!
আমার ঠোটের প্রতিটি স্পন্দন খেলা করে
তোমার বুকের পাহাড় ছুঁয়ে, তোমার গলায়, তোমার কানের আশেপাশে!
তোমার কপাল বেয়ে নামা চুম্বন গড়ায়
কোমল ঠোটের হরণস্পর্শে!
সেদিন কি তুমি গল্প শুনবে?.
চাঁদের আলোর তুমুল প্রেমাতালের রাতে!
ঠিক সেদিনেরই কথা বলছি; তুমি কি সেদিন আমার হবে?
সেদিন আসবে কবে? শোনো তবে!
যেদিন মাঘ পেড়িয়ে দেখা দেবে ফাল্গুন..
গাছে গাছে লালচে রক্ত রাঙা শিমুল
তুমুল তটে প্রেম জোয়ারে ক্ষুব্ধ বন তমাল
টালমাটাকে নতুন রস সঞ্চার, বিক্ষুব্ধ প্রেমের জোয়ার।
আমি সেদিনেরই কথা বলছি, ঠিক সেদিনের কথা।
ঠিক সেদিনেরই কথা শোনো,
যেদিন গাছের ফাকে পাতা বেয়ে হাসবে চাঁদ
মলাটে থাকবে না কোন কাটাকুটি প্রবাদ.
সুখে সুখে ভরে উঠবে হৃদয় হ্রদ..
ঠিক সেদিনেরই কথা বলছি, যেদিন আসবে ফাগুন।
স্তব্ধ পবণে শিরশিরে কোমল বাতাস,
পাতাদের জরাজরিতে উড়ে যাবে পত্রমিতালি..
যেদিন থাকবে না কোন দুর্দশা, দুর্যোগ, দুশ্চিন্তা..
সেদিনের-ই কথা বলছি তোমায়..
ঠিক সেদিনেরই কথা..
যেদিন লেখা হবে তুমুক যুগল প্রণয় কাব্য
পাতা পবণে পাখিদের কুঞ্জগানে..
শহুরে ঝঞ্জাট রিক্সার টুংটাং আওয়াজে
তোমায় দেখে হবো আবেগী.
মস্তিষ্কে কবিতার সিম্ফোনী..
হৃদয়ে রাসায়নিক বিক্রিয়া..
বলতে পারো আত্মহারা হয়ে গেছি..
যাকে ভেবে বসতে পারো..
বদ্ধ উন্মাদ.. এসব কিছুই কল্পনার আঁক
শহুরের আকাশে, অট্টালিকা পেড়িয়ে
উড়ে যায় পাখিদের ঝাক-
রাস্তায় পড়ে থাকা রডোরেন্ড্রন..
ঠিক সেদিনেরই কথা বলি শোনো..
যেদিন রাস্তায় নামবে মানুষের ঢল
ভোর-প্রভাতে সুখের মিছিল
রক্তরাঙা প্রভাত হবে মধুর মিছিলে..
অনাহারী পাবে তৃপ্তি খাবার..
আমাদের পিছু নেবে একটি নেংটি কুকুর
আমরা তাকে খাবার দেবো
হাত বুলিয়ে দেব মাথায়..
এসব দেখাদেখি আসবে একটি শাদা বেড়াল..
তাকে আমি কোলে নেবো..তার সারা গায় হাত বোলাবো পরম মমতায়।
চুপ..! ঘুমিয়েছে.. ঘুমিয়েছে সে আমার কোলে।
এসব ভেবে কেটে যায় কত দিন রজনী..
কেউ কেউ বদলে যায়..
মানুষের রং বদলায়..পালটে যায় চেহারা
তুমি যদি বলো আমায় কঠিন কথা..
যা হঠাৎ বিশ্বাস হবে না আমার..
তুমি যদি বলো আসবে না আমার ভূবনে
বাসবে না ভালো আমায়,
বসন্তের কোকিল পাখির কুহুতানে!
শোনো তবে, বসন্ত কেটে গেলে পুড়বো আমি চৈত্রের সর্বনাশে।
কালবোশেখের ঝড়ে হব রণচণ্ডা,
অথবা ক্রোধের আগুনের বিষবাষ্পে ছেয়ে যাবে চৈত্রের অভিশাপ…
রেডিওতে মহাদূর্যোগবাণী, ঘোর সতর্কতা।
ঘোর কেটে যাবে বৈশাখের রুদ্রঝড়ে..
তুমি যদি বলো আমি বেহায়া হবো..
জ্যোৎস্নাহীণ বেদনার রাতে জোনাকী হয়ে আলো ছড়াবো।
সবুজে পাতার আড়ালে লাল ফুল হয়ে তোমায় ভালোবাসবো।
যেমন চৈত্রকে ভালোবাসা বোশেখের কালঝড়,
নীলখামে মেঘফুলে উড়ে যায় ঝড়োহাওয়া
এরপর হয় তুমুল বর্ষণ, ঝড়ে যায় ফুলের বকুল..
আরও কত কিছু হয়, অভিশাপ নামে জীবনে..
এরপরও যদি ভালো না বাসো আমায়..
হবো আমি আষাঢ়ের ঘনবর্ষা..
উতলা বাতাসে, শ্রাবণের আকাশে
ঝরে অঝোর বর্ষা..
তুমি হবে নীল অপরাজিতা..
নীল ফুলে মেঘে মেঘে আষাঢ় ঘনঘটা
আমি বরং বৃষ্টি হই..
আশির্বাদ হই কারো জীবনে..
কেউ ভিজুক, মুক্তি পাক আষাঢ় পবণে..
মেঘে মেঘে কাটুক বর্ষা..
এখানেই থাক এই গল্পের উপসংহার..