নিবন্ধ: মহালয়া

নিবন্ধ: মহালয়া
নিবন্ধ: মহালয়া

বিপ্লব গোস্বামী

মহালয়া শারদ উৎসবের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।হিন্দু ধর্ম মতে মহালয়ার দিন থেকেই দূর্গা পূজার সূচনা হয়।শাস্ত্র অনুসারে এই দিন মহাশক্তি দূর্গতিনাশিনী অসুরবিনাশিনী দেবী দূর্গা মর্ত‍্যে আবির্ভূত হন।দেবতারা যখন মহিষ নামক অসুরে কাছে পরাজিত হয়ে স্বর্গচ‍্যুত,ত্রিলোকে তখন অশুভ শক্তির কবলে। তখন সেই অশুভ শক্তিকে বিনাশ করতে সকল দেবতাগণ ব্রহ্মাকে পুরোবর্তী করে মহাদেব ও বিষ্ণুর নিকট উপস্থিত হয়ে নিজেদের দুর্দশা এবং অসুরদিগের অত‍্যাচারের কাহিনী বিবৃত করেন এবং উনাদের শরণাপন্ন হন।অসুর দিগের এই অন‍্যায়,অধর্ম,অত‍্যাচারের কথা শোনে উনারা খুব ক্রুদ্ধ হন।তখন ক্রুদ্ধ ব্রহ্মা,বিষ্ণ,মহেশ্বরের বদন হইতে এক মহান তেজঃ নির্গত হয়।তা দেখে সমস্ত দেবতাগণের শরীর  হইতেও তেজ নির্গত হইতে থাকে।সেই সমস্ত তেজ একত্রে পুঞ্জীপুত হয়ে সৃষ্টি হয় এক মহাশক্তি। আর দেবী দূর্গা হলেন সেই মহাশক্তির মূলাধার।তাই মহালয়ার মহাভোরে মন্দিরে মন্দিরে শঙ্খ ধ্বনি,উলু ধ্বনি ও চণ্ডী পাঠের মধ‍্যে দিয়ে দেবিকে আবাহন জানানো হয়।অন‍্য এক মতে মহালয়ার দিন দেবী উমা কৈলাশ থেকে বাপের বাড়ির উদ্দেশ‍্যে যাত্র শুরু করেন।
আশ্বিন মাসের কৃষ্ণপক্ষের অবসান ও দেবীপক্ষের সূচনার অমবস‍্যাই হচ্ছে মহালয়া।এই কৃষ্ণপক্ষকে অপরপক্ষ বা পির্তৃপক্ষ বলা হয়।হিন্দু ধর্ম মতে এই পূণ‍্য তিথিতে স্বর্গীত পিতৃপুরুষের উদ্দেশ‍্যে পার্বন শ্রাদ্ধ ও তর্পন করা হয়।ধর্ম মতে স্বর্গেত পিতৃ পুরুষদের তখন যমালয় থেকে মর্ত‍্যে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।এই তিথিতে পূর্ব পুরুষদের স্মরণ করে এবং তাদের আত্মার শান্তি কামনা করে গঙ্গায় অঞ্জলি প্রদান করা হয় বা তর্পণ করা হয়।

 শাস্ত্র মতে পিতৃলোক স্বর্গলোক ও মর্ত‍্যেলোকের  মধ‍্যে অবস্থিত।যার শাসক যম রাজ।তিনি সদ‍্য মৃত ব‍্যক্তির আত্ম মর্ত‍্য থেকে নিয়ে যায়।মহাভারতে বর্ণনা মতে মহাবীর কর্ণ বীরগতি প্রাপ্ত হলে তার আত্ম স্বর্গে চলে যায়।স্বর্গের তাকে খেতে দেওয়া হয় সোনা আর ধন রত্ন।তখন তিনি দেবরাজ ইন্দ্রকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে উত্তরে ইন্দ্র বলেন কর্ণ সারা জীবন সোনা ধন রত্নই দান করেছেন কিন্তু কখনো পিতৃগণের উদ্দেশ‍্যে কোন দিন কিছু দান করেননি।তাই স্বর্গে তাকে খাদ‍্য হিসাবে শুধু সোনা ও ধন রত্ন দেওয়া হয়েছে।তখন কর্ণ দেবরাজকে বলেন তাতে আমার দোষ কি। আমিতো পিতৃ পুরুষের পরিচয়টুকুও জানতাম না।যখন জানতে পারলাম তখন আমার তর্পণ করার সময়টুকুও ছিল না।মাতা কুন্তি মহাভারতের যুদ্ধের আগে আমার পিতৃ পুরুষের পরিচয় দিয়েছিলেন।আমি আমার পিতৃ পুরুষের  তর্পণ করারতো সময়ই পেলাম না।ইন্দ্র তখন বুঝতে পারলেন তাতে কর্ণের দোষ নেই।তখন তিনি কর্ণ কে পনেরো দিনের জন‍্য মর্ত‍্যে ফিরে গিয়ে পিতৃ পুরুষের তর্পন করার অনুমতি দিলেন। ইন্দ্রের কথামত কর্ণ এক পক্ষ কাল ধরে মর্ত‍্যে অবস্থান করে পিতৃপুষদের অন্ন জল দিলেন।তার পাপ ক্ষয় হলো।তাই মহালয়ার দিনে পিতৃ পুরুষের উদ্দেশ‍্যে তর্পণ করা হয়।

মহালয়ার এই পূণ‍্য প্রভাতে পৃথিবীর সর্বত্র, সনাতন ধর্মের মানুষ যেখানে আছে সেখানেই মন্দিরে মন্দিরে শঙ্খ ঘন্টা বাজিয়ে উলু ধ্বনিতে দিয়ে আর চণ্ডী পাঠের মধ‍্য দিয়ে আদি শক্তি দূর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গাকে আবাহন করা হয়।অশুভ,অন‍্যায়,অসুর শক্তিকে নাশ করে শুভ শক্তি প্রতিষ্ঠা করার জন‍্য সর্বত্র করা হয় দেবীর আরাধনা।আকাশবানীতে বেজে উঠে বিরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের সেই যাদু কন্ঠে ” আশ্বিনের শারদ প্রাতে বেজে উঠেছে আলোক মঞ্জির।ধরণীর বহিরাকাশে অন্তরিত মেঘমালা প্রকৃতির অন্তরাকাশে জাগরিত জ‍্যোতিরমহী জগতমাতার আগমনবার্তা।আনন্দমহী মহামায়ার পদধ্বনি অসীমছন্দে ভেসে উঠে রূপলোক ও রসলোকে আনে নবভাবমাধুরীর সঞ্জীবন।”

আকাশে বাতাসে ধ্বনিত হয়
“যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেণ সংস্থিতা।
নমস্তস‍্যৈ নমস্তস‍্যৈ নমস্তস‍্যৈ নমো নমঃ।।
যা দেবী সর্বভূতেষু শক্তিরূপেণ সংস্থিতা।
নমস্তস‍্যৈ নমস্তস‍্যৈ নমস্তস‍্যৈ নমো নমঃ।।
যা দেবী সর্বভূতেষু শান্তিরূপেণ সংস্থিতা।
নমস্তস‍্যৈ নমস্তস‍্যৈ নমস্তস‍্যৈ নমো নমঃ।।”

সম্পর্কিত বিভাগ

পোস্টটি শেয়ার করুন

Facebook
WhatsApp
Telegram
বাঁশি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

বাঁশি – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

শুনুন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত কবিতা বাঁশি । কবিতাটি আবৃত্তি করেছেন কলকাতার সু-পরিচিত সাহিত্যিক মহীতোষ গায়েন। শুনুন এবং জানান আপনার মতামত-    
কবিতা- "অশ্রু কেন ঝরে"। সাপ্তাহিক স্রোত -১১

কবিতা- “অশ্রু কেন ঝরে”। সাপ্তাহিক স্রোত -১১

| হাওর কবি শহীদুল্লাহ্    নেত্র তুমি কপালের নিচে – মানুষের মন থেকে, চোখে অশ্রু কেন ঝরে? দেখিতে পাইনা জল, কোথা হতে আসে! বিবেগে যখন ...
রহস্যঘেরা শিমুলতলা [পর্ব-০৩]

রহস্যঘেরা শিমুলতলা [পর্ব-০৩]

গৌতম সরকার আজ বিকেলে ইচ্ছে করে ওরা খেলতে গেলনা। ওরা চাইছে, বুড়োটা আর তার কাজের লোক ভাবুক সকালের ঘটনায় ওরা ভয় পেয়ে গেছে তাই ওদিকে ...
ঈদুল আজহার দুটি ছড়া 

ঈদুল আজহার দুটি ছড়া 

ইমতিয়াজ সুলতান ইমরান  কোরবানি দাও মনের পশু কোরবানি দাও ভালো কথা একটু দেখো ভেবে মোটা তাজা কিনবে পশু কিসের টাকা জেবে? ঘুষের টাকায় পশু কিনে ...
বঙ্গবন্ধু তুমি

বঙ্গবন্ধু তুমি

আশিক মাহমুদ রিয়াদ বঙ্গবন্ধু তুমি লাল সবুজের বুকে আকাশে-বাতাসে মুক্ত আশারধ্বনী, বঙ্গবন্ধু তুমি শোসকদের বিপরীতে রাঙা চোখখানি, তরবারির চেয়েও ধারালো তোমার তর্জনী! বঙ্গবন্ধু তুমি দীপ্ত ...
ভৌগলিক সীমানার ওপারে 

ভৌগলিক সীমানার ওপারে 

নিলুফা জামান    সেদিন আমি অন্তর আর পিনাকী… তিন বন্ধু ঘুরতে বের হয়েছি, গাড়ী ছুটছে সোঁ সোঁ করে উল্কা বেগে। মনে হচ্ছে বহু দীর্ঘ পথ ...
Scroll to Top