[গত পর্বের পর থেকে]
আষাড়ের কোন এক সন্ধ্যে বেলা। বাইরে টিপ টিপ বৃষ্টি সারাদিন। ভীষণ জ্বরে কাতর তমাল। বাইরে বিক্ষুব্ধ ঠান্ডা বাতাস। সেই বাতাস যেন তমালের গায়ের তাপমাত্রা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। তমাল পাতলা একটি কাঁথামুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে রুমের ছোট্ট একটি সিঙ্গেল খাটে। এটা তমালের ঘর, দক্ষিণ দিকের জানলা দিয়ে তাকালে প্রীতির ঘরটাও এখান থেকে দেখা যায়। তবে জানলা বন্ধ, সারদিন মুষলধারে বৃষ্টি হওয়ায় কারণে কাঠের জানলা ভিজে আছে।
সন্ধ্যে বেলায় বৃষ্টি দম দিয়েছে ক্ষণ! আকাশে মেঘের দোলাচল কমে সাদা বরফে মেঘ উড়ছে। কাঁথার তল থেকে মাথা বের করে বাইরের দিকে তাকাতেই আলোর ঝাপটা এসে লাগে তমালের চোখে। অস্বস্তিতে খানিক চোখ বন্ধ করে আবারও চোখ মেলে তাকাতেই ঘরের দেউড়িতে একটি মেয়ের অন্ধকারচ্ছন্ন ছায়া দেখতে পায় তমাল। কিছুটা বুক দুরু দুরু করে ওঠে, সারাদিন শুয়েছিলো বলে মাথায় কেমন অদ্ভুত দোলাচল শুরু হয়েছে। দু’চারবার দিয়েছে নেশাতুর ঘুম।
মেয়েটি তমালের বিছানার দিকে এগিয়ে গেল। মেয়েটির শারিরিক গঠন দেখে তমাল এতক্ষণে বুঝে গিয়েছে! ছায়ামূর্তিটি প্রীতির।
-কিরে ঢিলু! সন্ধ্যেবেলাতেও ভূতের মতো ঘুমাচ্ছিস কেন?
-তমাল লম্বা একটা নিশ্বাস নেয়। এ নিশ্বাসে যে কোন মেয়ের বুকে দুরুদুরু শুরু হয়ে যায়। ছেলেদের কিছু কিছু জিনিস মেয়েরা পছন্দ করে। তার সবথেকে বড় একটি কারণ, ছেলেদের পৌরষস্বত্তা।
-তমাল চোখ ডলা ডলি শেষ করে প্রীতিকে বলে, তোকে কতবার বলেছি! তুই আমাকে ‘ঢুলু’ বলে ডাকবি না।
-আত্মবিশ্বাসের স্বর এনে প্রীতি বলে, ঢুলু না রে গাঁধা। তোর নাম ঢিলু।
তমাল কোন পালটা জবাব না দিয়ে কাঁথা মুড়ি দিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে আবার।
-প্রীতি এবার তমালকে ব্যাঙ্গ করে বলে, তোকে কি আর সাঁধে সাঁধে ঢিলু ডাকি?
সারাদিন বিছানায় শুয়ে থাকবি। তোদের বাসায় আসলাম কোঁথায় গল্প করবো তা না।
-কাঁথার তল থেকে মাথা বের করে প্রীতকে রাগন্বিত গলায় তমাল বলে, এই সন্ধ্যে বেলায় আমার শাকচুন্নির সাথে কথা বলার কোন ইচ্ছা নেই। আমার জ্বর! প্লিজ রেস্ট নিতে দে। আর না দিতে দিলে আমার ঘর থেকে বেড়িয়ে যা!
প্রীতি এরপর নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকে কিছুক্ষণ। তমাল চোখ বুজে ভাবে, প্রীতিকে এত কঠিন করে বলাটা তার মোটেও উচিত হয়নি। বাইরে দূরে বাঁজ পড়ে খুব শব্দ করে। বাজ পড়লে মেয়েরা একটু হলেও ভয় পেয়ে চিৎকার দিতে ওঠে। এই স্বভাবের ব্যাতিক্রম নয় প্রীতিও তবুও..প্রীতি কিছু করলো না। তমাল কাঁথার তলায় বসেই বাজ পড়ার শব্দে চমকে গিয়েছিলো। তবে সে তার থেকেও বেশি অবাক হলো প্রীতির কোন রেসপন্স না পেয়ে। কাঁথার তলা থেকে মাথা বের করে প্রীতির দিকে তাকাতেই দেখলো…প্রীতির চোখে জল। এরপর অভিমান করে যখন প্রীতি খাট থেকে উঠে যাবে ঠিক তখনই চারদিক দিনের আলোর মতো ফর্সা করে আরও একটি বাজ পড়লো ধারে কাছে কোথাও। প্রীতি এবার ভয় পেলো ভীষণ। প্রীতিকে আটকাতে তমালও তখন থতমত হয়ে শোয়া থেকে উঠে বসেছে। প্রীতি ভয় পেয়ে এসে পড়লো তমালের গায়ে, তমালের জ্বর কাতুরে শরীর প্রীতির ভার না নিতে পেরে প্রীতিকে সমেত পড়লো বিছানায়। অন্ধকারের মধ্যে তমাল তার ঠোটে অদ্ভুত কিছু একটা অনুভব করে। তমাল আর দেরী করে না, নিজের মুখের মধ্যে এটে নেয় প্রীতির ঠোট। এরপর চলে অদ্ভুত সম্মোহন, ঠোট রেখে এবার তমালের ঠোট এগোয় প্রীতির গলায়। বাইরে বৃষ্টির তোরজোড় বেড়েছে দু’টো বজ্রপাতের পর। প্রীতি যেন নিস্তেজ হয়ে পড়েছে, প্রীতির মাথায় তখন কি চলছে? প্রীতির তমালকে বাঁধা দেওয়ার কোন শক্তি পাচ্ছে না। অবশ্য প্রীতি চাচ্ছেও না বাঁধা দেওয়ার। সে এক জীবনের নতুন স্বাদের সন্ধান পেয়েছে। যার পরশ সে আগে কখনো কোনদিন পায়নি। তমালের নাকের গরম নিশ্বাস প্রীতির গলা বেয়ে নামে ঘন নিশ্বাসের বুকে। জ্বর কাতুরে শরীরে তমাল সেদিন পৃথিবীর সব থেকে সম্মোহিত ঘ্রাণের সন্ধান পায়। তমাল প্রীতির বুকে নিজের মাথা ঠেকিয়ে লম্বা একটা নিশ্বাস নেয়। এ নিশ্বাস যেন জন্মান্তরের নিশ্বাস। এরপর যখন আরও একটা বাজ পড়ে ততক্ষণে তমালের উত্তপ্ত অর্ধনগ্ন শরীরের নিচে প্রীতি। প্রীতি ধাক্কা দিয়ে তমালকে সরিয়ে দেয় নিজের অবচেতন শক্তির জোরে। তমাল এবার ঘন নিশ্বাসের সাথে সাথে নিজের জ্বর কাতুরে শরীর নিয়ে দুটো হাত প্রসরিত করে নিজেকে স্বর্বৎস উজাড় করে দেয় ঘর্মাক্ত বিছানার জ্বলন্ত ক্রোধের বুকে।
প্রীতি বিছানা থেকে উঠে নিজের জামা ঠিক করে দৌড়ে বের হয়ে যায় পাশের ঘরে।
[পরের পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন]
“আপনার সামান্য উৎসাহ আমাদের অনেক বড় করে তুলবে।” সাবস্ক্রাইব করুন – ছাইলিপির ইউটিউব চ্যানেল]