জিসানের ছোট থেকেই বড় হওয়া পর্যন্ত পুরোটা সময় কাটে তার চট্টগ্রাম শহরে। গ্রামে যাওয়া হয়। তবে খুব কম ৷ জিসানের এ যান্ত্রিক শহর চেয়ে তার গ্রাম্য চিরসবুজ নিরিবিলি পরিবেশ ভালো লাগে৷
জিসান খুব রহস্য প্রেমি৷ তার বয়স ষোল কি সতেরো হবে৷ খুব দুরন্ত ছেলে। বরাবরের মত সে পড়ালেখায় ভালো। তার ইচ্ছা সে বড় হয়ে গোয়েন্দা হবে৷ আর সারাদিন রহস্যের পেছনে ছোটে বেড়াবে৷ রহস্যের সমাধান করতে তার অনেক বেশি ভালো লাগে৷
.
কয়েকদিন আগেই জিসানের এস এস সি পরীক্ষা শেষ হয়৷ এই প্রায় দেড়টা বছর সে কোথাও যায় নি। তার পরিবারের সবার একটাই কথা। জিসানকে গোল্ডেন এ+ পেতেই হবে। তাই সে পরিবারের চাপে হোক নিজের জন্যে হোক গত দেড় বছর মনোযোগ সহকারেই পড়েছে। তাই তার তেমন কোথাও বেড়াতে যাওয়া হয়নি। এখন পরীক্ষা এ বন্ধতে সে তার গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার কথা৷ আগেই তো বলেছি গ্রাম জিসানের অনেক প্রিয় এ যান্ত্রিক শহর থেকেও।
তাই এবারের ছুটিটা সে গ্রামেই কাঁটাতে চাই৷..
তার গ্রামের বাড়ি হলো চট্টগ্রামের বোয়ালখালিতে। থাকে চট্টগ্রাম শহরে। তাই রওনা দিল সকাল নয়টার দিকে তার দাদুর বাড়ির উদ্দেশ্যে। সাথে তার বাবা শিহাব সাহেব৷ ছেলেকে দিয়েই আবার চলে আসবেন। ঘন্টা খানেকের মধ্যেই পৌঁছে গেল তাদের গন্তব্যে৷ জিসানের যাওয়ার খবরটা আগে থেকে তার দাদা আনিস সাহেব কে বলে রেখেছেন। গ্রামে জিসানের চাচা – চাচি, আর চাচাত ভাই বোনের সাথে থাকেন আনিস সাহেব। জিসানের বাবা শিহাব সাহেব অনেক করে চেয়েছেন আনিস সাহেবকে শহরে নিয়ে আসতে। কিন্তু নিয়ে আসলেও এক সপ্তাহের বেশি তিনি থাকেন না। তার নাকি দাম বন্ধ হয়ে আসে এ যান্ত্রিক শহরের যান্ত্রিক মানুষের ভিড়ে।
.
জিসানদের প্রিমিয়ো কারটা একেবারেই তার দাদার বাড়ির উঠোনের সামনে গিয়ে থামল। জিসানদের কারটা দেখেই ঘরথেকে বেরিয়ে এলেন আনিস সাহেব।
. এই যে দাদু ভাই চলে এসেছ৷
জিসান গিয়ে দাদাকে পা ছোঁয়ে সালাম করল৷
. হ্যাঁ দাদু চলে। এসেছি এবার এখানে পুরো দুসপ্তাহ থেকে যাবো৷ (জিসান)
. বাবা আসসালামু আলাইকুম। (শিহাব সাহেব)
. ওয়ালাইকুম আসসালাম। একলা আসলি। বউমা কোথায়? তিন্নি কোথায়? (আনিস সাহেব)
(তিন্নি জিসানের ছোট বোন।)
. বাবা তিন্নির স্কুল খোলা। তাই আসেনি। সামনে পরীক্ষা ওর৷ (শিহাব সাহেব)
.আচ্ছা ভেতরে আই। (আনিস সাহেব)
কথাগুলো বলতে বলতে তিনজনই বাড়িতে ঢুকে পড়ল।
দুপুরে খাওয়া দাওয়া সেরে শিহাব সাহেব চলে গেলেন। জিসানের জার্নি হওয়াতে সে ঘুমিয়ে পড়ল। ঐ দিন পুরোটা বাড়িতেই কাটিয়ে দিল সে।
.
.
পরের দিন খুব ভোরেই উঠে গেল সে৷ দাদার সাথে হাঁটতে গেল সাথে গেল তার সমবয়সী চাচাত ভাই মেহেদী। জিসানের খুব ভালো লাগছে। তার মনটাও বেশ ফুরফুরে হয়ে আছে। এমন সুন্দর গ্রামীণ পরিবেশ দিয়েই যদি সকালটা শুরু হয় তাহলে সবার মনটা এমনেই ভালো হয়ে যাবে। জিসান হাঁটতে হাঁটতে একটা জায়গায় গিয়ে তার চোখ তার আটকালো। বোয়ালখালিতে প্রচুর রাবার বাগান আছে৷ সেরকম একটা রাবার বাগানের উপরে লেখা প্রবেশ নিষিদ্ধ৷ বাগানের ভেতরের দিকটাই একটা তিনতলা বিশিষ্ট বাড়ি। এখান থেকে দেখে যা মনে হয় বাড়িটা বেশ পুরোনো।
.
জিসান দাদার কাছ থেকে বাড়িটা সম্পর্কে জানতে চাইল।
.দাদা এ বাগানে ঢোকতে দেয় না কেন? (জিসান)
.এখানে সমস্যা আছে। (দাদা)
. কি সমস্যা।
. আচ্ছা আসো দাঁড়িয়ে থেকে লাভ নেই। ওখানে যে একবার যাই সে আর ফিরে আসে না। (মেহেদী কথাটা বলে উঠল)
মেহেদীর কথাটা জিসানের কানে গেল কি না বুঝা গেল না।
. দাদুভাই চলে এস। (আনিস সাহেব)
জিসান আর একবার বাড়িটার দিকে তাকাল। আবার হাঁটতে শুরু করল৷ কিছুক্ষণের মধ্যেই বাড়িতে পৌঁছে গেল।
.
.
জিসানের রহস্য প্রেমী মন কিছুতেই কিছু মানতে ছাইছে না তার কেমন একটা যেন খটকা লাগছে ঐ বাগানবাড়িটাকে নিয়ে৷ তার ইচ্ছা করছিল একবার বাড়িটাতে ঢোকার। কিন্তু আবার একলা ঢোকার সাহস করছে না।
.মেহেদী শোননা, ঐ বাগানবাড়িটা দেখতে যাবো চল না। (জিসান)
. সকালে না দেখলি। এখন আবার কেন? (মেহেদী)
.না এমনেই চলনা প্লিজ। শুধু দেখব৷ (জিসান)
.না বাবা আমি যাবো না। দাদার কাছে শুনেছি ওঘরে নাকি যে মানুষগুলো একবার যায় সে আর ফিরে আসে না। আমার ভয় করে আমি যাবো না। (মেহেদী)
. ভীতুর ডিম কোথাকার। আমরা শুধু বাইরে থেকে দেখব৷ চলনা, চলনা। (জিসান)
.না মানে ইয়ে৷ কিন্তু দাদাভাই জানতে পারলে রাগ করবে৷ (মেহেদী)
.সেটা পরে দেখা যাবে। (জিসান)
.আচ্ছা চল। কিন্তু এক শর্তে আমি ওখানে ঢুকতে পারব না। (মেহেদী)
.সেটা পরে দেখা যাবে। তুই তৈরি হ। আমি আসছি৷ (জিসান)
জিসান তার রুমে গিয়ে ব্যাগের মধ্যে টর্চ লাইট, চুরি, দড়ি, কয়েকটা কোল্ডড্রিংকস ব্যাগে নিয়ে নিল৷ আর এই পুরোনো বাগান বাড়িতে সাপ থাকতে পারে কিংবা অন্য কোনো সমস্যা হলে তাই জরুরি চিকিৎসা নিতে একটা ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে নিল ব্যাগে৷
.
মেহেদী দাঁড়িয়ে জিসানের জন্য অপেক্ষা করছে।
.এতক্ষণ কি করছিলি? (জিসান কে প্রশ্ন করল মেহেদী)
.তেমন কিছুনা প্রয়োজনীয় কয়েকটা জিনিস নিচ্ছিলাম। (জিসান)
.তোর কথাগুলো আমি কখনোই ভালোভাবেই বুঝতে পারিনা। (মেহেদী)
.পিচ্ছি মানুষ তোর এত বোঝা লাগবে না। এখন চল, তাহলে। (জিসান)
.হুম চল৷ (মেহেদী)
পথে কেউ আর তেমন কথা বলল না। চুপচাপ হেটেই নিঃশব্দে এসে পৌঁছে গেল বাগানবাড়িতে ।
.এখন কি করবি? (মেহেদী)
.একটু এখানটায় দেখব। আর বাকিটুকু ভেতরে গিয়ে দেখব৷ আর আমি তোকে মিথ্যা বলেছি। আমি এই বাড়িতে ঢুকতে চাই। আমার মনে হয়। এখানে কোথাও একটা সমস্যা আছে। (জিসান)
.তুই কি বলতে চাইতেছিস সেটা আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে না। (মেহেদী)
. আমার কথা এটাই, আমি বাড়ির ভিতরে যাবো।(জিসান)
.আমি যাবো না। (মেহেদী)
.তাহলে কি করার আমাকে একলাই যেতে হবে। (জিসান)
জিসান আর কথা না বাড়িয়ে সোজা হাঁটা শুরু করল তার গন্তব্যের দিকে। কিছুদূর গিয়েই আবার কিছুটা পিছিয়ে এল। তার দৃষ্টি তীক্ষ্ণ। কি একটা যেন দেখল, কিছুক্ষণ মনোযোগ সহকারে সেদিকেই তাকিয়ে থাকল। তারপর মুখটা তুলে মেহেদী করে ডাক দিল। মেহেদী প্রথমে আসতে রাজি ছিল না। পরে জিসানের জোরাজোরিতে আসতে হলো। এবার মেহেদীর চোখ কপালে উঠার পালা।
.এটা কি করে সম্ভব?(মেহেদী)
.আমি বলেছিলাম না। এর ভেতর কোনো এক রহস্য লুকিয়ে আছে। আমার ধারণাই ঠিক। (জিসান)
. কিন্তু আমি শুনেছি গত ত্রিশ বছরে এদিকে কারো পা পড়ে নি।
.আসলে সবাই যা জানে যা শোনে তা সবসময় ঠিক হয় না।
.তাইতো দেখতে পাচ্ছি। এখন কি করবি?
. আমি এমন রহস্যের খোঁজ করছিলাম অনেকদিন ধরে। অবশেষে পেয়ে গেলাম। এবারো আমি এর সমাধান করেই ছাড়ব। (জিসান)
মেহেদী আমতা…আমতা করতে করতে শেষে সে ও রাজি হয়ে গেল।
.
.
-আচ্ছা তোরা এ বাড়িটাকে কি নামে জানিস? আর এ বাড়িটা সম্পর্কে আমাকে কোনো তথ্য দিতে পারবি? (জিসান)
.তেমন কিছুই না৷ তবে এটাকে সবাই ভুতুড়ে বাড়ি বলেই জানে। আর কয়েকবছর আগে দুজন যুবক এখান থেকেই গুম হয়ে যায়। এর আগে অবশ্য অনেকেই গুম হয়ে যায় এখান থেকে। তারপর থেকে এদিকে আর কেউ আসেনি। (মেহেদী)
.হুম। তাহলে তোর কথা মতো আমরা এখানে প্রথম নই আমাদের আগেও অনেকে এখানে এসেছে। ভালোই তো দেখা যাক কদ্দূর যাওয়া যায়। (জিসান)
আর কেউ কোনো কথা বলেনি।
জিসান বারবার মাঠির মধ্যে চাকার দাগগুলো দেখতে লাগল। প্রথমে স্বিদ্ধান্ত নিল এ চাকার দাগ অনুসরণ করেই এগিয়ে যেতে লাগল। এর মধ্যে বাগানবাড়ি ফেলে এসেছে পেছনে। অনুসরণ করে একটা জায়গায় চাকার দাগগুলো আর নেই। যেখানে এসে দাঁড়িয়েছে তার চেয়ে হাত দশেক দূরে তারা একটা কোল্ড ড্রিংকস এর কৌটা আবিষ্কার করল।
ড্রিংক এর কৌটা দেখে মনে হচ্ছে কয়েকদিন আগের খাওয়া৷ জিসানের সন্দেহের পরিমাণটা আরো বাড়তে লাগল৷ ওখানে কিছুক্ষণ এদিক সেদিক তাকিয়ে তেমন কিছু আর দেখতে পেল না। তাই দুজনে আবার বাগানবাড়িতে ফেরত এল।
.
. আমাদের কি ভেতরে ঢোকা উচিত হবে?(অস্পষ্ট স্বরে প্রশ্ন করল মেহেদী)
. সব ঘটনা যখন এই বাড়ি টাকে নিয়ে। তাহলে আমার মতে এই বাড়িতেই আমরা কিছু পেতে পারি। যা আমাদের এই সমস্যাটা সমাধানের জন্য সুবিধা হবে৷ (জিসান)
মেহেদী কে দেখে মনে হল সে ভয় পাচ্ছে । কিন্তু জিসান কে দেখে সেটা মনে হল না৷ সে ভেতরে যাওয়ার জন্য দরজার হাতল ঘুরিয়ে হাল্কা টান দিতেই ক্যাচক্যাচ শব্দ করে খুলে গেল দরজা।
জিনিসটা জিসানকে বেশ অবাক করল৷ কারণ এত পুরোনো বাড়িতে দরজাটা এত সহজে খোলার কথা নই। তার মানে এখানে আর কেউ থাকে। যার ফলে দরজাটা খোলা বন্ধ করার ফলে দরজার লকটা এখনো ঠিক আছে৷
.
যতই সামনে এগোচ্ছে জিসানের সন্দেহ ততই বাড়তে থাকল। পা টিপে টিপে দুজনে বাড়ির ভেতরে ঢুকে পড়ল। আসে পাশে থাকাতেই বুঝতে পারল টর্চ লাইট ছাড়া কাজ হবে না। জিসান ব্যাগ থেকে টর্চ লাইটটা বের করে আলো জ্বেলে দিল৷ কক্ষের চার পাশে আলো ফেলতেই বুঝতে পারল তারা বড়কোনো হল ঘরের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে। বাড়িতে পুরোনো আমলের কিছু জিনিসপত্র, চারপাশে কিছু ব্যাক্তির ছবি টাঙানো, বসার জন্য সোফা । এরুমে এগুলো ছাড়া আর তেমন কিছুই নেই। এভাবে করে প্রত্যেকটা রুম চেক করা হয়ে গেল। কিন্তু তাদের সমাধানের কাজে লাগে এমন কিছুই পেল না। জিসান একটা সময় খেয়াল করল মেহেদী তার সাথে নেই। জিসান এবার ঘাবড়ে গেল৷ সে খেয়াল করল কখন যে সে তিনতলায় চলে এল।
জিসান মেহেদী কে ঢেকেই চলছে। প্রতিটা রুম ও দেখছে কিন্তু কোথাও মেহেদীকে দেখা গেল না। জিসান ভয় পেয়ে গেল। সে দৌঁড়ে উপর থেকে নিচে নেমে এল৷ বাড়ি থেকে বের হয়ে আসার জন্য দরজার কাছে এসে দরজার হাতল ধরে টান দিতেই দরজা আর খুলছে না। আবার দরজার হাতলটা ধরে হ্যাঁচকা টান দিতেই এবার হাতলটা খুলে জিসানের হাতে চলে এল। সে গিয়ে মেঝেতে ছিটকে পড়ল।
.
জিসান উঠে দাঁড়াল আবার হল ঘরের দিকে গেল। কিন্তু একি হলরুমের ভেতরে ঢুকতে পুরো ঘর আলোকিত হয়ে গেল৷ জিসান বুঝতে পারছে না তার সাথে কি ঘটছে বা ঘটতে যাচ্ছে। আশেপাশে চোখ বুলালো খেয়াল করল একটা পুতুল তার দিকেই এগিয়ে আসছে৷ জিসান ব্যাগ থেকে চুরিটা বের করে সে প্রস্তুত হয়ে আছে৷ পুতুলটার দূরত্ব তার কাছ থেকে হাত পাঁচেক।
এবার ঘটে গেল আরেক অবাক করা কান্ড। বি মৃত পুতুলটা জীবন্ত হয়ে গেল৷ পুতুল কথা বলতে শুরু করল৷
. বাগানবাড়ি গেইম ইন স্টার্ট নাও। ওয়েলকাম টু আওয়ার ডার্ক গেইম। (পুতুল)
.হোয়াট, হু আর ইউ। (জিসান)
উত্তর এলনা
.আই কান্ট দিস আন্ডারস্ট্যান্ড এন্ড আই ডোন্ট নৌ দিস গেইম রোলস।(জিসান)
জীবন্ত পুতুলের কাছ থেকে উত্তর পেল না। তবে পুতুলটা জিসানের দিকেই এগিয়ে আসছে। জিসান হাতের চুরিটা শক্ত করে ধরে মানসিকভাবে কিছু একটার জন্য প্রস্তুত হয়ে রইল। জীবন্ত পুতুলটা সামনে আসতেই পুতুলটার উপর আক্রমণ করে বসে জিসান৷ এক্কেবারে সঠিক পরিকল্পনার আক্রমণ। প্রথম আক্রমণেই ধরাশায়ী হয়ে পড়ে পুতুল নিচে মাঠিতে পড়ে গিয়ে স্বাভাবিক পুতুলের মত হয়ে গেল। সামনে এগুতে লাগল
জিসান খুব সতর্ক হয়ে রয়েছে কোন সময় কোনদিক থেকে কি বিপদ উৎ পেতে আছে তাতো বলা যায় না। চারপাশে সতর্ক দৃষ্টি রেখে সাবধানে ঘুটিঘুটি পায়ে এগিয়ে চলছে৷ জিসানের কাছে এটা পরিষ্কার তার থেকে বের হতে হলে এই গেইমটা জিততে হবে। এবার সিড়ি বেয়ে দুতলায় উঠে গেল৷ দুতলায় উঠে একটু ভেতর যাওয়ার পর পর এবার সেখানের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। জিসান একবার পেছনে ফিরে থাকাল। তারপর আবার সামনে এগোতে লাগল। চারদিকে ঘন অন্ধকার। টর্চ লাইটের আলোটা জ্বেলে সামনে এগোতে লাগল। কয়েক কদম সামনে এগোনোর পর জিসানের মনে হলো তার নিচ থেকে পাথর সরে যাচ্ছে। জিসান এক দৌঁড়ে এক্কেবারে কক্ষের ওপারে চলে গেল৷ তার কয়েক সেকেন্ড পর পুরো মেঝে সরে গেল। জিসান অবাক হয়ে গেল৷ জিসান এখন যে জায়গাটায় দাঁড়িয়ে আছে সেটা তার কাছে নিরাপদ মনে হল না৷ সে গিয়ে একটা পিলারের পাশে গিয়ে দাঁড়াল। তার ধারণা সত্যি করে দিয়ে যে জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিল সেখান থেকেও মেঝেটাও সরে গেল। জিসান এবার পিলারকে আঁকড়ে ধরে আছে৷ পিলারের সাথে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷ এবার পিলারের থেকে নিয়ে একহাত জায়গা পর্যন্ত অবশিষ্ট আছে মেঝে।
যা করার খুব দ্রুতই করতে হবে জিসানকে৷ জিসান তার ব্যাগ থেকে দড়িটা নিল তার এক প্রান্তে একটা কোল্ড ড্রিংকস এর এর বোতল বেঁধে নিল৷ কারণ উপরের দিকে একটা ধাতব পাইপ রয়েছে যেটা একেবারে এ কক্ষের শেষ প্রান্ত অবধি।
জিসান তাই কোল্ড ড্রিংকস বাঁধা দড়ির প্রান্তটা উপরের দিকে ছুঁড়ে দিল প্রথমবারে হলনা৷ দ্বিতীয়বারে সফল হলো দড়িটা ধাতব পাইপের সাথে ঝুলিয়ে সেটা ধরেই ঝুলে পড়ল জিসান। এবার ধীরে ধীরে দড়ি টার সাহায্য পার হচ্ছে পার হওয়ার সময় নিচে তাকাল৷ এমন কিছু জিনিস দেখল যেটা দেখার জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিল না৷ নিচে বড় বড় চুরি সবগুলো সোজা করা এককথায় ভুলে নিচে পড়ে গেলে মৃত্যু ছাড়া উপায় নেই। তারপর সেখানে বেশ কিছু মানবকঙ্কাল দেখতে পেল। যেগুলো খুব বিদঘুটে অবস্থায় রয়েছে। জিসানের তখনি বমি চলে আসছিল৷
আর অঘটনটা গঠত তখনি যখন সে অসতর্ক হয়ে পড়ে ফলে দড়ি থেকে একটা হাত ফসকে যায় ভাগ্য ভালো কোনোরকমে সে নিজেকে সামলে নেয়। এভাবে প্রায় আরো মিনিট চারেক চলার পর সে পার হয়ে যায় ঐ কক্ষটা এবার তিনতলায় এসে পড়ে। দড়িতে বাঁধানো ড্রিংকসটা খেয়ে নেই৷ তার এমন অবস্থা আর একপা সামনে এগিয়ে চলার মত শক্তি আর নেই। তাই ওখানেই মেঝেতেই শুয়ে পরল। এভাবে প্রায় মিনিট পাঁচেক সময় কেটে। এখানে এক একটা মিনিট এক একটা ঘন্টার মত মনে হতে লাগল জিসানের কাছে৷
.
.
টিং টিং টিং টিং টিং টিং….
ঘন্টার শব্দ।
জিসান ঘন্টার শব্দ শুনতে পেল।
জিসান উঠে দাঁড়াল। এমন মনে হচ্ছে উঠার ক্ষমতায় সে হারিয়ে ফেলেছে৷ পুরো শরীর বাঁধা দিচ্ছে। হাড়গুলো প্রতিবাদ করছে। তারপরেও বেঁচে থাকতে হলে তাকে উঠতেই হবে। শেষমেশ উঠে দাঁড়াল।
.
ওহ শিট… জিসান মনে মনে বলল,, ” একটুর জন্য বেঁচে গেলাম। ” একটা বড় আকারের ধাতব পিন্ড দোল খাচ্ছে যেটা এখন জিসানের পাশ দিয়েই গেল । এক মুহূর্তের জন্যে না সরলে জিসানের জীবনের খাতা ওখানেই বন্ধ হয়ে যেত। ধাতব গোলকের চারপাশে লাগানো ধারালো ছোট চুরিতে গেতে গিয়ে।
যাক ভাগ্য ভালো এবারো বেঁচে ফিরল। ভালো করে খেয়াল করল৷ এধরনের ধাতব গোলক অনেক এখানে এগুলো তাকে পার হতেই হবে। কি করার৷ জিসান মেঝেতে শুয়ে পড়ল, কখনো হামাগুড়ি, কখনো গড়িয়ে, কখনো শুয়ে অনেক কষ্টে পার করল এই ধাতব গোলকগুলো। তারপর একটা ধাতব চুরির একটু অংশ তার বাম হাতের বাহুতে লাগাতে কেটে যায়। জিসান তার ব্যাগ থেকে ফার্স্ট এইড বক্সটা বের করে ক্ষত জায়গায় বেন্ডেজ করে নিল। বেন্ডেজ বলতে একটু মলম আর তুলো দিয়ে বেঁধে নিল ক্ষতটা৷ এবার পরের রুমে ঢুকতেই আওয়াজ আসে।
— কনগ্রেচুয়ালেশন–
-ওয়েলকাম টু ফাইনাল রাউন্ড৷
জিসান এবার বুজতে পারল তার মানে সে এতক্ষন গেইম এর লেভেল পার করে আসছিল৷ এটা শেষ রাউন্ড এখানে সে জিততে পারলে মুক্ত হয়ে যাবে। তাই তাকে এ রাউন্ড ভালো করে খেলতে হবে৷ জিসান সামনে অগ্রসর হলো৷ গিয়ে দেখল সামনে একটা টেবিলে দুটো পাথর রাখা। ওখানে একটা কাগজে লেখা।
“ঘন্টায় লাগাতে হবে৷ ”
জিসান খেয়াল করল। সামনে একটা ঘন্টা রয়েছে ঝুলানো অবস্থায়। জিসান হাতে পাথর দুটো নিল প্রথমটা ছুড়ল।কিন্তু লাগল না৷ ঘন্টা দোলন্ত অবস্থায় আছে এটাতে লাগানো কঠিন। এখন না লাগিয়ে উপায় নেই। তাই হাতের পাথরটা ছুড়ে মারল ঘন্টাকে উদ্দেশ্য করে ঘন্টা লাগল না তবে গিয়ে লাগল ঘন্টার পেছনের একটা আয়নাতে জিসান কে অবাক করে দিয়ে সাথে সাথে খুলে গেল এক সুরঙ্গ। জিসান আর দেরি করলনা ঢুকে পড়ল সেটাতে। সেটা দিয়ে চলে আসার সময় একটা গোপন কক্ষ আবিষ্কার করল। তবে এখানে সে এসে যা দেখল এতে তার অবাক না হয়ে পারল না৷ সে একমুহূর্তের জন্যে ভুলে গেল সে কোথায় আছে। এটা জিসান স্বপ্নেও কল্পনা করেনি।
.
তার আপন চাচা আর চাচাত ভাই ওখানে বসা৷ তাদের সাথে বেশ কিছু বিদেশি লোক। খেয়াল করল ওখানে হাতির দাঁত, পশুর চামড়া, আরে অনেককিছু। জিসানের বুঝতে বাকি রইল না এটাকোনো ভুতুড়ে বাড়ি নই এটাকে ভুতুড়ে বানিয়ে রাখা হয়েছে৷ কারণ এখান থেকেই চোরাকারবারি, অবৈধ কোনো কাজ হয়। জিসান দরজার বাইরে ভালো করে লক করে দিল৷ সোজা সুরঙ্গ পথে বেরিয়ে এল। সুরঙ্গ পথটা যেখানে শেষ হয়েছে। জায়গাটা সে চিনতে পারল। এ বাড়িতে ঢুকার আগে তারা গাড়ির চাকার দাগ অনুসরণ করে এতটুকু এসেছিল।
জিসান তারাতাড়ি তার দাদারবাড়িতে গিয়ে দাদাকে সব জানাল। তার দাদা দ্রুত থানায় খবরটা দিল৷ আর গিয়ে আটক করা হলো। জিসানের চাচা চাঁচত ভাই৷ আর বিদেশি লোকগুলোকে। জিসানের দাদা একটা কথায় বলল তার চাচাকে” বাইরের শত্রুর চেয়ে ঘরের শত্রু বেশি ভয়ানক। আর তুই যে পয়সার লোভে গ্রামের মানুষের সাথে এভাবে ধোঁকা বাজি করলি৷ কত নিরীহ মানুষের প্রাণ নিলি৷ সবকিছুর জন্য তুই দায়ী। তোর ক্ষমা নাই। ”
কয়েকদিন পর জিসান আবার হাঁটতে হাঁটতে বাড়িটার সামনে এসে দাঁড়াল। জিসানকে উদ্দেশ্য করে তার দাদা বলল, কিছু কলঙ্কজনক ঘটনার সাক্ষী হয়ে থাকল এই বাগানবাড়ি৷
জিসান খুশি মনেই বাড়ি ফিরল। সে খুব খুশি তার নিজের গ্রামের জন্য কিছু করতে পেরেছে। আর এভাবেই শেষ হল।
বাগানবাড়ির রহস্য..