রহস্য গল্প – অতল বুড়ি

রহস্য গল্প - অতল বুড়ি
রহস্য গল্প - অতল বুড়ি

নাঈমুর রহমান নাহিদ

সকালের নাস্তা সেরে রাইসা ও সামিহা বাড়ির পাশের বেড়া দেয়া পুকুরপাড়টায় পা ডুবিয়ে বসে গল্প করছিল। ছুটিতে সামিহার বাড়িতে বেড়াতে এসেছে রাইসা। ভার্সিটিতে একই ডিপার্টমেন্টে পড়ে তারা। থাকেও একসাথে, একটি মেস ভাড়া করে। ভার্সিটি বেশকিছুদিন বন্ধ থাকায় অনেকটা জোড় করেই রাইসাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে এসেছে সামিহা। বন্ধের এই সময়টা সামিহার বাড়িতে বেশ ভালোই কাটছে রাইসার।শীতের সিজন না হলেও সামিহার মা প্রতিদিন সকালে খেজুর গুড় আর চালের গুড়ো দিয়ে বিভিন্ন ধরণের পিঠে বানিয়ে খাওয়ান রাইসাকে। একেক পিঠের একেক স্বাদ। কিন্তু সবগুলোই সুস্বাদু। অনেক পিঠের নাম তো রাইসার নিজেরও জানা নেই। সামিহার মায়ের এমন আন্তরিকতা মুগ্ধ করে রাইসাকে। রাইসা নিয়মিত সামিহার মায়ের থেকে পিঠেগুলো বানানো শিখে নেয় বাড়ি গিয়ে তার মাকে সেগুলো বানানো শেখাবে বলে।

পুকুরের পানিতে পা ডুবিয়ে পা নাচাতে নাচাতে রাইসা বলল, ‘ইশ, সাতার জানলে পুকুরে কিছুক্ষণ সাতার কাটতে পারতাম। সামিহা, তুই আমাকে সাতার শেখা আজ।’
‘আরে ধুর, পাগল নাকি!’ একগাল হেসে বলল সামিহা। আমি নিজেই তো সাতার পারিনা। তোকে আর কী শেখাবো?’
‘তোদের বাড়িতে পুকুর থাকার পরেও তুই সাতার পারিসনা!’ ব্যাপারটা যেন ভীষণ অবাক করল রাইসাকে।
‘কীভাবে শিখব? দেখছিস না পুকুরের চারিদিকে কেমন বেড়া দিয়ে ঘেরাও করে রেখেছে? কখনো নামতেই দেয়নি এই পুকুরে। সবাই বলে এই পুকুরে নাকি অতল বুড়ি আছে। পুকুরে কেউ নামলে নাকি তাকে পা টেনে পুকুরের গভীরে নিয়ে যায়। তারপর মেরে ফেলে তাকে। হাউ ফানি!’
‘কিহ! অতল বুড়ি! ইন্টারেস্টিং।’ ঠোঁট বাঁকা করে হেসে বলে রাইসা। ‘এসব কথা মানুষ কীভাবে যে বিশ্বাস করে? সত্যিই অদ্ভুত।’
‘অদ্ভুত তো বটেই।’ দীর্ঘ একটা শ্বাস ছেড়ে বলে সামিহা। ‘আমি এত করে বাড়ির সবাইকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি এসব “অতল বুড়ি” “ফতল বুড়ি” বলতে কিছু নেই। কিন্তু কেউ আমার কথা শুনলে তো।
‘তা এমন বিশ্বাস সবার মাঝে সৃষ্টি হওয়ার কারণটা কী?’
‘শুনেছি এই পুকুরে নাকি আমার ছোট চাচু ডুবে মারা গেছেন। সেটাও বহু বছর আগে। আমি তাকে দেখিনি। চাচু যেদিন মারা গিয়েছিল সেদিন রাতে নাকি পুকুরের মাঝখান থেকে একটা আলো জ্বলে উঠেছিল। ব্যাপারটা গ্রামের মুরুব্বিদের জানালে তারা বলে এর মধ্যে নাকি অতল বুড়ি আছে। পুকুরে যে নামবে তাকেই বুড়ি টেনে পানির ভিতরে নিয়ে যাবে। ব্যস, দাদু আর দেরি না করে সেদিনই বেড়া লাগিয়ে দিল পুকুরের চারপাশে। আর হুকুম জারি করল এই পুকুরে যেন কেউ ভুলেও না নামে।’
‘তোর চাচু কি সাঁতার জানত?’
‘শেখার পর্যায়ে ছিল নাকি।’
‘তাহলে তো তার ডুবে যাওটা অস্বাভাবিক কিছুনা।’
‘সেটা কি আর এরা বুঝবে? এই যে তুই আর আমি এখানে বসে আছি। কেউ যদি আমাদের দেখে, দেখবি সাথে সাথেই চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু হয়ে গেছে।’
‘আচ্ছা চল এখন উঠি। অনেকক্ষণ বসে ছিলাম।’
পুকুরের পানি থেকে পা উঠিয়ে ঘরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়ায় রাইসা ও সামিহা। পুকুরপাড়ে জমে থাকা শেওলায় ভেজা পা পরতেই পা পিছলে তাল হারিয়ে পুকুরে পরে যায় রাইসা। সাঁতার না জানায় পুকুরের পানিতে বাঁচার জন্য হাত-পা ছোড়াছুঁড়ি করতে থাকে সে। সামিহা ভয়ে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে উঠে। রাইসাকে বাঁচানোর জন্য বাড়ির সবাইকে ডাকতে থাকে সে। সামিহার চিৎকার শুনে বাড়ির সবাই ছুটে আসে পুকুর পাড়ে। রাইসাকে পুকুরে হাবুডুবু খেতে দেখে সামিহার মা সবাইকে সাবধান করে কেউ যেন পুকুরের কাছে না যায়। সামিহাকেও শক্ত করে ধরে রাখে তার মা। রাইসাকে বাঁচানোর জন্য সামিহার আকুতি কারো কানে যেন পৌঁছায় না। মায়ের সাবধানবাণী শুনতে পায় সামিহা। কাউকে বলছে, ‘অতল বুড়ি জাইগা উঠছে আবার। অতল বুড়িই বেচারী মাইয়াডারে টাইনা নিয়া গেছে পুকুরে। এত কইরা মানা করছি এই পুকুরে না আইতে। কেউ শুনলে তো আমার কথা। এই তোরা কেউ পুকুরে নামতে যাইসনা।’
কিছুক্ষণ হাবুডুবু খাওয়ার পর একসময় রাইসা হারিয়ে যায় পুকুরের গভীরে। পাড়ে দাঁড়িয়ে রাইসার কোন চিহ্নই দেখা যায়না আর। নির্বাক দাঁড়িয়ে নির্লিপ্ত দৃষ্টিতে রাইসার অস্তিত্বহীন হওয়ার দৃশ্য দেখে সামিহা। তার বাড়িতে ঘুরতে এসে অতল বুড়ির স্বীকারে পরিণত হয়ে গেছে রাইসা। অতল বুড়ির! নাকি কুসংস্কারের?

 

ইসলামনগর, মাতুয়াইল, ঢাকা।

“বিনা অনুমতিতে এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা কপি করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। কেউ যদি অনুমতি ছাড়া লেখা কপি করে ফেসবুক কিংবা অন্য কোন প্লাটফর্মে প্রকাশ করেন, এবং সেই লেখা নিজের বলে চালিয়ে দেন তাহলে সেই ব্যাক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য থাকবে
ছাইলিপি ম্যাগাজিন।”

সম্পর্কিত বিভাগ

পোস্টটি শেয়ার করুন

Facebook
WhatsApp
Telegram
রহস্য গল্প - অতল বুড়ি

রহস্য গল্প – অতল বুড়ি

নাঈমুর রহমান নাহিদ সকালের নাস্তা সেরে রাইসা ও সামিহা বাড়ির পাশের বেড়া দেয়া পুকুরপাড়টায় পা ডুবিয়ে বসে গল্প করছিল। ছুটিতে সামিহার বাড়িতে বেড়াতে এসেছে রাইসা। ...
ঈদ সওগাত

ঈদ সওগাত

গৌতম সরকার ও আমার মেঘলা আকাশ একটু বৃষ্টি দিও খুশির এই ঈদের দিনে আমাদের দাওয়াত নিও। ও ভাই মেঘলা আকাশ গ্রীষ্মের নিদাঘ দিনে শরীরের ঘামগুলো ...
পটাদা ফিরে এসেছে

পটাদা ফিরে এসেছে

শুভ্র শোভন রায় অর্ক চায়ের দোকানের ঝুপড়িতে ধুমধ্রাম চাঁটির আওয়াজ শোনা গেলো কয়েকটা। পটাদা পায়ের উপর পা তুলে বসা। পরনে কালো জোব্বার মত কি জানি ...
Fact Check: 12 Common Misconceptions About Stock Market

Fact Check: 12 Common Misconceptions About Stock Market

Cursus iaculis etiam in In nullam donec sem sed consequat scelerisque nibh amet, massa egestas risus, gravida vel amet, imperdiet volutpat rutrum sociis quis velit, ...
অচিনপুরের দেশে: সপ্তম পর্ব

অচিনপুরের দেশে: সপ্তম পর্ব

গৌতম সরকার হেলথ সেন্টারটা গ্রামের উত্তর দিকে। এই গ্রামে সপ্তাহান্তিক যে হাট বসে, সেই হাটতলা পেরিয়ে যেতে হয়। মাঠ থেকে ফিরে খাওয়া-দাওয়া সেরে বেরোতে চাইছিলাম, ...
কবিতা- নারী

কবিতা- নারী

 সেগুফতা আনসারী   জন্ম জন্মান্তরে, যুগ যুগান্তরে যে নারী করিছে পুরুষের আরতি, সে নয় ত কোন ভোগের পন্য সে যে একসাথে চলার সারথি।   পুরুষের ...