সেলিব্রেটি

সেলিব্রেটি

জোবায়ের রাজু

ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেতা ইশতিয়াক আহমেদের অ্যাক্সিডেন্টের নিউজটা পত্রিকায় প্রথম চোখে পড়ে বাবলির। মাকে নিউজটা জানাতেই চমকে উঠেন শাহানা। চমকে উঠবেন নাও বা কেন! মা মেয়ে দুজনেরই যে ভীষণ প্রিয় ইশতিয়াক। অসাধারণ অভিনয় দক্ষতায় ইশতিয়াক কেড়ে নিয়েছেন দুই প্রজন্মের দুই দৃষ্টি। নাটকে বাবার ভূমিকায় অভিনয় করা এই অভিনেতাকে নিয়ে পত্রিকায় যে নিউজটা হয়েছে, সেটার শিরোনাম ‘শুটিং এ মারাত্মক আহত অভিনেতা ইশতিয়াক।’ বিস্তারিত পড়ে জানা গেল গতকাল নাটকের শুটিং চলাকালে দোতলা থেকে নিচে পড়ে যান ইশতিয়াক। বর্তমানে তিনি প্রাইম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

নিউজটা পড়ে উতালা হয়ে উঠেছে বাবলি। প্রাইম হাসপাতাল তাদের বাসা থেকে দূরে নয়। ত্রিশ টাকা রিকশা ভাড়া। প্রিয় অভিনেতার এই দুঃসময়ে তাকে সরাসরি দেখতে ব্যাকুল বাবলি। মাকে বলতেই প্রথমে আপত্তি জানালেন শাহানা। আজকের এই অভিনেতা যে তার জীবনের কী জিনিস ছিল, সেটা তো মেয়ে জানে না। মেয়ের সাথে বন্ধুর মত সম্পর্ক থাকলেও শাহানা কখনো বাবলিকে বলেননি তার জীবনে ইশতিয়াকের আগমনের সেই পুরণো প্রেমের গল্প।

ভার্সিটির একই বিভাগে পড়তেন ইশতিয়াক আর শাহানা। সেখান থেকে দুজনের মন দেয়া নেয়া শুরু। দুজনের নিঃস্বার্থ প্রেম গভীর হয়ে গিয়েছিল। বাবা ততদিনে শাহানার জন্যে পাত্র খুঁজছেন। শাহানা একদিন ইশতিয়াককে নিয়ে বাবার মুখোমুখি দাঁড়ায়। মেয়ের পাশে ইশতিয়াককে মানানসই দেখে প্রথমে রাজী হলেন আকবর সাহেব। পরে যখন ইশতিয়াকের নিন্মবিত্ত পরিবারের টানাপোঁড়নের রসহীন গল্প জানলেন, তখনই তিনি আপত্তি বাঁধলেন। জীবনের জন্য সুন্দর চেহারা নয়, টাকাটা আগে জরুরি। আকবর সাহেব সেটাই বুঝিয়ে দিলেন ইশতিয়াককে।

পাত্র হিসেবে ইশতিয়াককে উপযুক্ত মনে হলেও ইশতিয়াকের ফ্যামেলীর গল্প শুনে পিছিয়ে যান আকবর সাহেব। ওই অভাবের সংসারে মেয়েকে কোনভাবেই পাঠাবেন না তিনি। কিন্তু শাহানা অসহায়। ইশতিয়াককে ছাড়া তার বেঁচে থেকে লাভ কী! তিনি সিদ্ধান্ত নেন ইশতিয়াককে নিয়ে পালিয়ে যাবেন। সে ভাবনা থেকে তিনি এক কাপড়ে চলে আসেন ইশতিয়াকের কাছে। কিন্তু ইশতিয়াক এভাবে শাহানাকে গ্রহন করতে রাজি নন। ফিরিয়ে দেন প্রিয়তমাকে। বুক ভরা দুঃখ নিয়ে ফিরে আসেন শাহানা।

আকবর সাহেব ধুমধামে বিয়ের আয়োজনের মাধ্যমে মেয়েকে তুলে দেন জাহাঙ্গীরের হাতে। বিয়ের পর জাহাঙ্গীর শাহানাকে নিয়ে ঢাকায় চলে আসে। বিয়ের বারো বছর পর মা হন শাহানা। অপূর্ব রুপ নিয়ে জন্মায় বাবলি। স্বামী, সংসার, সন্তান নিয়ে জীবনের মোড় ঘুরে যায় শাহানার। কিন্তু মন থেকে পারেননি ইশতিয়াককে ভুলে থাকতে।



টেলিভিশনের চ্যানেল পাল্টাতে গিয়ে হঠাৎ কিসের এক বিজ্ঞাপনে প্রথম ইশতিয়াককে দেখেন শাহানা। ততদিনে মিডিয়ায় আলোচিত ও পরিচিত মুখ ইশতিয়াক। বাবলি বড় হতে থাকে। ইশতিয়াকের একজন অন্ধ ভক্তে পরিণত হয় সে। সে প্রিয় অভিনেতাকে কল্পনায় বাবার আসনে জায়গা দিয়েছে। ইউটিউব ঘেঁটে ঘেঁটে ইশতিয়াকের নাটকগুলি ডাউনলোড করে পরে অবসরে মা মেয়ে দুজনে সেসব নাটকের নিরব দর্শক হয়ে উঠে।

২.

অবশেষে মাকে রাজি করাতে পেরেছে বাবলি। বিকেলে তারা প্রাইম হাসপাতালে রওনা দেয় রিকশা যোগে। পথিমধ্যে রিকশা থামিয়ে শাহানা ফুল দোকানে ঢুকেন বেলী ফুল কিনতে। বেলী ফুল ইশতিয়াকের বড় পছন্দের। দুজনের প্রেমের যখন মধুর সময় কাটছিল চুপচাপ, ইশতিয়াক প্রায়ই শাহানাকে বলতেন তার প্রিয় ফুলের গল্প। ফুল দোকানে যে সচরাচর বেলী ফুল পাওয়া যায় না, শাহানার জানা ছিল না। ফুল না পেয়ে নিরাশ হয়ে মেয়ের পাশে এসে রিকশায় বসলেন। রিকশা হাসপাতালের সামনে এসে থামলো।

৩০৩ নাম্বার কেবিনে শুয়ে আছেন ইশতিয়াক। দু চোখ তার ব্যান্ডেজ করা। আঘাতটা চোখেই বেশি লেগেছে। বাবলি নার্সের কাছে পরিচয় দিয়ে মাকে নিয়ে কেবিনে ঢুকলো। শাহানার চোখের সামনে শুয়ে আছেন মুমূর্ষ ইশতিয়াক। অনেক বছর পর হারানো আপনজনকে এভাবে চোখের সামনে দেখবেন, কখনো ভাবেননি। বাবলি জীবনে এই প্রথম প্রিয় অভিনেতাকে সরাসরি দেখে আনন্দে আত্মভোলা। বেশ আকুলতা নিয়ে সে ইশতিয়াকের পাশে বসে। ব্যাকুল গলায় জানাতে থাকে তার মনের সব অনুভুতি। ইশতিয়াক সব ব্যাখ্যা শুনে রিনরিনে গলায় বলেন ‘আমার কি দুর্ভাগ্য দেখো, তোমার মত সেরা ভক্তকে কাছে পেয়েও দেখতে পাচ্ছি না।’ ইশতিয়াকের কথায় আত্ম তৃপ্তিতে মনটা ভরে গেল বাবলির। মেয়ের পাশে ঠায় দাঁড়িয়ে আছেন শাহানা।



-জানেন, আমার আম্মুও আপনার ভক্ত। আমার সাথে আম্মুও এসেছেন।

-তাই নাকি! আসসালামুয়ালাইকুম। ভালো আছেন আপনি?

নিচু কণ্ঠে শাহানা বলেন ‘আমি ভালো আছি।’ ইশতিয়াক কৃতজ্ঞ গলায় বললেন ‘আপনারা আমাকে দেখতে এসেছেনে জেনে বড় ভালো লাগছে। মা মেয়ে দুজনকে দেখতে পেলে আরো ভালো লাগতো। এই মেয়ে শোনো, তোমার আম্মুর গলাটা কেন জানি খুব পরিচিত মনে হলো। হা হা হা।’

ইশতিয়াকের কথা শোনে শাহানা মনে মনে বললেন ‘হ্যাঁ প্রিয়, পরিচিত মনে তো হবেই। এক সময় কাছের ছিলে তুমি আমার। আজ তুমি সেলিব্রেটি।’

বাবলি ইশতিয়াকের সাথে নানান বিষয়ে গল্পের আসর তুললো। ইশতিয়াকের আফসোস, দু চোখে ব্যান্ডেজ বলে দুজন ভক্তকে দেখতে পাচ্ছেন না।

 

আমিশাপাড়া, নোয়াখালী। 

“বিনা অনুমতিতে এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা কপি করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। কেউ যদি অনুমতি ছাড়া লেখা কপি করে ফেসবুক কিংবা অন্য কোন প্লাটফর্মে প্রকাশ করেন, এবং সেই লেখা নিজের বলে চালিয়ে দেন তাহলে সেই ব্যাক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য থাকবে
ছাইলিপি ম্যাগাজিন।”

সম্পর্কিত বিভাগ

পোস্টটি শেয়ার করুন

Facebook
WhatsApp
Telegram
 যান্ত্রিক শহর - কবিতা / রাইয়ানুল ইসলাম 

 যান্ত্রিক শহর – কবিতা / রাইয়ানুল ইসলাম 

I রাইয়ানুল ইসলাম    পৃথিবীর অক্ষরেখা ক্ষয়ে যায়, প্রাচীন মরিচীকায় ধোয়াশা হয় গন্তব্য একূল ওকূল সক্রিয় প্রাণীর পদচিহ্ন বাড়তে বাড়তে পূর্ণ হয় ভূমি আমি কি ...
তুমিও কী তাই?

তুমিও কী তাই?

ড. মির্জা গোলাম সারোয়ার পিপিএম বিশ্ববিদ্যালয়ের করিডোরে নির্বাক দাঁড়িয়ে তুমি যেন একগুচ্ছ ফুটন্ত লালগোলাপ , পরনে লাল শাড়ি কপালে টিপের আঁচড় সুগন্ধি ছড়িয়ে পরিবেশ করেছো ...
প্রীতির গায়ের গন্ধ

প্রীতির গায়ের গন্ধ

আশিক মাহমুদ রিয়াদ রাত দেড়টা! যে গরম পড়েছে এতে সাধারণ মানুষের এই দুর্বিষহ গরমে হাঁসফাস করার অবস্থা। সেখানে অদ্ভুত কোন এক সম্মোহনী টানে এই গরমেও ...
এবার মরু: প্রথম পর্ব

এবার মরু: প্রথম পর্ব

গৌতম সরকার তখন ওমিক্রনের ভয় জাঁকিয়ে বসেছে, ব্রিটেন-ইউরোপের বেড়া টপকিয়ে ভারতেও ঢুকে পড়েছে এই ভাইরাস, মানুষকে বাইরে বেরোতে হলেও প্রতি মুহূর্তে সন্ত্রস্ত থাকতে হচ্ছে, সেইরকম ...
The Ultimate Guide to Stock Market

The Ultimate Guide to Stock Market

Cursus iaculis etiam in In nullam donec sem sed consequat scelerisque nibh amet, massa egestas risus, gravida vel amet, imperdiet volutpat rutrum sociis quis velit, ...
বাসরসকাল

বাসরসকাল

আনোয়ার রশীদ সাগর আমার প্রথম বাসর হয়েছিল শ্বশুর বাড়ি। বাসর সাজাচ্ছে যারা তাদের কাউকেই চিনি না। হেমন্তের জ্যোৎস্নাপ্লাবিত রাত। উঠোনময় সরগম চলছে। আলোআঁধারিতে  ঘেরা পরিবেশ। ...