ফাল্গুনী খান
সদ্য কিশোর থেকে
যৌবনে পা দিলাম
হাজারো রঙে এই পৃথিবী
দেখা শুরু করলাম
বন্ধুদের সাথে আড্ডা
জমে উঠলো চায়ের টঙ্কে
দেরি করে ঘরে ফিরলে রাতে
শেষ হতো মায়ের বকুনিতে
বৃষ্টি পছন্দ ছিল না
পছন্দ ছিল না তার আমেজ
গ্রীষ্মে বাতাস খেয়ে
বা শীতে আলসেমিতে
দিন কাটতো ঘরেতে
হটাৎ বেলা শেষে
ফিরছি ঘরের উদ্দেশ্য
পা একটু বেশি দৌড়ে ওপর ছিল
মাথায় ছিল মায়ের বকুনির কথাগুলো
আচমকা ধাক্কা লাগলো
এক স্নিগ্ধ কোমলী নারীর কাধে
ক্ষমা চাইতে চাইলাম তার মুখপানে
মনে হলো আকাশে বিদ্যুৎ চমকালো
তার রূপের ঝলকে
অপরূপ রুপ তার
দেখে মন হলো উদাসীন
মায়ের বকুনির কথা ভুলে
পা দুখানি চললো তার দুয়ারে
দু-তিন রাত চললো
শুধু সেই এলোকেশীর ভাবনাতে
আবার দেখার ইচ্ছেতে
ছুটলুম সেই পথেতে
নামলো বৃষ্টি
মেজাজটা হলো খিটমিটে
হঠাৎ কে যেন নামলো
টেক্সির দুয়ার খুলে
লাল শাড়ী কালো পাড়
খোলা চুল চোখে কাজল আর
ছোট একটা টিপ
এক পায়ে নূপুর
অন্য এক হাতে চুরি
সেদিন প্রথম ভালো লেগেছিল বৃষ্টিকে
মনে গেথেছিল তার আমেজ
সাহস করে গিয়েছিলাম তার পানে
চেয়ে রয়েছি অপলক দৃষ্টিতে
সাত দিনের মাথায় গেলাম বন্ধুর বাড়িতে
গিয়ে দেখি সেখানে বসে আছে
সেই অপরূপ কন্যাটি
বন্ধু কে জিজ্ঞেস করলাম
কে হয় এই কন্যা
দূর সম্পর্কের বোন বলে
পরিচয় করিয়ে দিলো আমার বন্ধুটা
পছন্দ হয়েছে সেই কন্যাকে
জানালাম বন্ধুর মাধ্যমে
অন্যের সাথে তার মন আদান-প্রদান
হয়েছে বহুদিন আগে
ভাগ্য আমার খারাপ এটা মেনে নিলাম
তিন দিন ঘরের দার দিয়ে ছিলাম
বুঝিয়ে ঘর থেকে বের করে
বাপ – মা পড়তে পাঠালো দূরে
ভেবেছিলাম সেখানে গিয়ে
ভুলে যাবো সেই কন্যাকে
পড়ার দিকে মন দিলাম
দূরের দেশে গিয়ে
কিন্তু প্রতি রাতে দেখি তারে
কন্যাটি আমার স্বপ্নে আসে
এভাবে পড়া শেষ করে চাকরি নিয়ে
বারো বছর পর ফিরলাম
মা দেখেশুনে বিয়ে দিলো
নিষেধ করলাম না
আট বছর সংসার জীবন
ভালোই চলছে দিনকাল
কিন্তু সেই বৃষ্টির আমেজ
আজও মনকে বলে বেলা শেষ
সেদিন ময়রার দোকানে
মিষ্টি কিনতে গিয়েছিলাম আমি
হঠাৎ কে যেন পিছন থেকে বলে
কেমন আছেন নন্দনাল চক্রবর্তী?
কেপে উঠলো ভিতরটা
পিছন ফিরে দেখি
এই তো সেই আমার
স্বপ্নের রাজকন্যাটা
বিশ বছর পর দেখলাম তাকে
কি বলবো ভেবে জিজ্ঞেস করেছিলাম
বিশ বছরে পরিবর্তন হওনি দেখি
সে বললো চিনেছেন আমাকে
বললাম সব ভোলা যায়
কিন্তু প্রথম ভালবাসা
ভোলা যায় কি সখী
হেসে দিয়ে বললো
কেমন আছে বাড়ীর সবাই?
বললাম বিশ বছর ধরে আমার মন বাদে
ভালোই আছে সবাই এই চক্রবর্তী পাড়ায়
জিজ্ঞেস করলাম
তোমার কি খবর সুধা
স্বামী -সন্তান নিয়ে ভালোই আছে
বললো আমাকে যার ডাক নাম চন্দ্রমল্লিকা
আসি বলে চলে গেলো
বৃষ্টি আবার নামলো
বৃষ্টি দেখে হেসে বাড়ি এলাম
বললাম তোর আমেজ থাকুক
বিশ বছর না মৃত্যুর আগ পর্যন্ত