দুরন্তপনা মেয়েটি-
ফিরছিলো বাড়ির মেঠো পথ ধরে!
আকাশ ছিলো তরুণ সন্ন্যাসীর মতন অটল।
সে কখনো চিন্তা করে নি সেদিনটাই ছিলো তার মুক্ত গোধূলিবেলাকে শেষবারের মতো দেখা?
সে কখনো ভাবেনি জোছনার আলো নিঁভে গিয়ে নেমে আসবে হঠাৎ অমাবস্যার অন্ধকার।
বোধ হলো কে যেনো তার পিছুপিছু আসছে?
ভয়ে গলা শুকিয়ে আসলো।
পিছনে তাকাতেই-
মায়ার চোখে নেমে এলো অন্ধকার।
হাত পা হলো বাঁধা?
অবচেতন মনে বুঝতে বাকি রইলো না কিছুই,
সে চোখের পলকেই হয়ে গেলো ধর্ষিতা!
ঘন্টাখানেক পরে কে যেনো তাকে কোলে তুলে বাড়ি পৌঁছে যায়!
মায়ার বাড়িতে আনাগুনা শুরু হলো হাজারো মানুষের।
মুখ লুকিয়ে ঘরের কোনে পরে থাকা,
শুরু হলো ডাক্তারী পরীক্ষা নিরীক্ষা?
ফরেনসিক রিপোর্ট আরো কতো কি!
সাংবাদিকের হাজারো প্রশ্নের উত্তর দিতে হয় লেন্সের সামনে উড়না ডাকা মুখে।
পুলিশের ইনভেস্টিগেশন ।
কবিরাও লিখতে শুরু করলো প্রতিবাদী কবিতা।
পাশের বাড়ির আন্টির অকথ্য কথা।
পাড়ার লোকেদের যেন আগ্রহের শেষ থাকে না সেদিনের অনুভূতি সম্পর্কে জানার জন্যে!
মায়ের হাহাকার,
ভাইবোনের নিরব কান্না
আর বাবার থানায় দৌড়াদৌড়ি?
আত্মীয় স্বজনের তাচ্ছিল্য যেনো আরো যন্ত্রণাদায়ক।
কাছের বন্ধুটি লুকিয়ে দেখা করলো বাড়ির পিছনে –
বন্ধুর মুখে নেই কোন বুলি!
নিরবতা শেষে যাওয়ার সময় বললো-
মা বলেছে এটো মেয়ের সাথে কোনো সম্পর্ক না রাখতে!
তখন মনে হলে একটা বিধবা মেয়ের চেয়ে হীনমন্যতার শিকার একটা ধর্ষিতা মেয়ে?
শেষ ভরসাটুকুও ভেঙে গেলো,
বেঁচে থাকার আশা ফুরিয়ে গেলো নিমিষেই!
হাজারো প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েও মাথায় যেনো একটাই প্রশ্ন –
আমার কাজ কি শুধু তুচ্ছ স্তন, নিতম্ব আর যোনি পথ পাহারা দেওয়া?
কান্নায় ভিজে যায় পড়নের উড়নাটা।
মুহূর্তেই তার আরো একটা বিষয় মাথায় দিলো হানা –
সাংবাদিক, ডাক্তার, পুলিশ, কবি আর মহল্লাবাসী পাবে নতুন বিষয়বস্তুর সন্ধান
যদি মারা যায় এই নব ধর্ষিতা?
আবিষ্কার হবে নতুন কিছু,
সময় ফুরিয়ে গেলে মুছে যাবে মায়া নামক ধর্ষিতার কাহিনি!
সংবাদপত্রে ছাপা হবে নতুন কোনো এক ধর্ষিতার নাম?
স্মৃতির জরায়ু থেকে সে নিজেকে মুছে ফেলতে চাইলো, মুছে যাবে এই তিক্ত অভিজ্ঞতার স্মৃতি,
ভাবতে ভাবতে খেয়ে নিলো স্লিপিং পিল মুঠো ভরে।
মুছে গেলে মায়ার অধ্যায়
হয়তো আসবে নতুন কোন মায়ার ধর্ষণের কাহিনি।
এই ভাবে কি পৃথিবী থেকে বিদায় নিবে ধর্ষিতা হাজারো মায়া নামক চরিত্র?
অলংকরণ- হুমায়রা বিনতে শাহরিয়ার।