Uncategorizedঅণুগল্পগল্পজীবনের গল্পসর্বশেষ

মুক্তিযুদ্ধের গল্প – একাত্তর

মোঃ লিখন হাসান

বিকেলের সূর্যটা পশ্চিম আকাশে হালতে শুরু করেছে।আমি নদীর পাড়ে বস সূর্য ডোবা দেখছি!কি সুন্দর গাঢ় লাল রঙের সূর্য।আমার মনটা যেনো কেড়ে নিচ্ছে।সূর্যটাকে ক্ষাণিক বড় দেখাচ্ছে।

নদীতে মাঝি নেই।ঘাটে ছোট একটা পাল তোলা নৌকা আর একটা ডিঙ্গি নৌকা বাধা।একা বসে বসে কয়েক মাস আগের কথা মনে করছি।কয়েক মাস আগেও তো আমরা সবাই মিলে স্কুলে যেতাম।সবাই মিলে কত না হৈহুল্লাের করতাম।আম বাগানে আম পাড়া,নদীতে লাফালাফি,কত না সুন্দর ছিল সেই মূহুত্ব গুলো।হঠাৎ কি হলো সেই রাতে!চারদিকে হাহাকার,নিস্তব্ধ প্রকৃতি,পাখি ডাকে না,ঝিঝি পোকারা আর ঝি ঝি সুরে গান গায় না।  সেদিন রাতে আমার বড় চাচা পাকিস্তানী বাহিনী গণহত্যার শিকার হন।আমাদের গ্রামের অনেকের ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।লুট করা হয় সম্পত্তি গৃহবধূ এবং যুবতী মেয়েদের ধরে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়।যুবক ছেলেদের নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়।আরও নানা ধরনের অত্যাচার জেল-জুলুম তো আছেই।এই এক ভয়াবহ দূঃস্বপ্ন আমাদের বাঙালীর অন্তরে গেঁথে আছে।

সূর্য প্রায় ডুবে যাচ্ছে!মাঝ নদীতে হঠাৎ দেখা যাচ্ছে একটা নৌকা আসছে।নৌকায় দশ-বারো জন যুদ্ধা অশ্র-সশ্র নিয়ে এদিকেই আসছে।আমি তাদের দেখে উঠে নৌকার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি;

নৌকাতে আমাদের গ্রামের সাতজন যোদ্ধা সহ আর কয়েকজন যোদ্ধা ছিল।

তাদের মাঝে আমাদের প্রতিবেশী আহাদ চাচা আমাকে ডেকে বললেন।তোর চাচী আর তিন বছরের মেয়ে কুলসুম কেমন আছে বাবা।

আমি বললাম ওরা সবাই ভালো আছে।

আহাদ চাচা আর তার সঙ্গীরা সবাই এবার আমাদের গ্রামেই থাকবে।আমিও তাদের নানা কাজে সাহায্য করব।তাদের খবর এনে দিব।তারপর সবাই মিলে এক সাথে আক্রমণ করে পাকিস্তানীদের কয়েকটি অস্থায়ী ক্যাম্প জ্বালিয়ে দিয়েছি।এবার খবরটা বেশ এবার খবরটা বেশ মারাক্ত ছিল।তাদের আক্রমণ করাটা বেশ কঠিন হয়ে পরেছে।চারদিকে পাকিস্তানী সৈন্য বাহিনী ঘিরে রেখেছে আমাদের এদিকে মুক্তিবাহিনী সংখ্যায় কম। আহাদ চাচা ও তার সঙ্গিরা মিলে বুদ্ধিবল কাজে লাগিয়ে পাকিস্তানী বাহিনী সাথে যুদ্ধ মোকাবেলা শুরু করল।প্রায় তিন ঘন্টা যুদ্ধ শেষে পাকিস্তানী বাহিনী কিছু সময়ের জন্য  লেজ গুটিয়ে পালিয়েছে।এদিকে মুক্তিবাহিনীর চার জন সেনা শহিদ হয়েছে।আক্রান্ত হয়েছে তিন জন।আহাদ চাচারও গুলি লেগেছে।মন হয় তিনি আর বাঁচবেন না।কিছু সময় পর আহাদ চাচার শরির নিস্তেজ হয়ে পড়েছে মন দেহে আর প্রান নেই।চাচার সঙ্গিরা চোখের জল মুছে শহিদের কাফন-দাফন সম্পন্ন করে আবার দ্বিতীয় ধাপে যুদ্ধ শুরু করল।চার-পাঁচ দিন এক টানা যুদ্ধ চলল।অবশেষে ঘনিয়ে এলো পাকিস্তানীদের পরাজয়।আমরা জয়ী হলাম।

২.
স্বাধীনতা অর্জন করলাম আমরা।পেলাম একটি আপন দেশ।একটি আপন পতাকা।এই সবুজ মাঠ-ঘাট সবই যেনো চির আপন।আপন আমার জন্মভূমি।শত কোটি বীরাঙ্গনার কাছে এই দেশের প্রতিটি মানুষ ঋণী।আমি চির কৃতজ্ঞ  জানাই এই দেশের প্রতিটি বীর যুদ্ধাদের।আমি শ্রদ্ধা জানাই বীরাঙ্গনা মা বোনদের।দীর্ঘায়ু কামনা করি এখন যে বীর যুদ্ধা বেঁচে আছে তার তোমাদের জন্যই আজ আমরা স্বাধীন।

এই লেখাটি শেয়ার করুন
ছাইলিপির ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

ছাইলিপির কথা

লেখালিখি ও সৃজনশীল সাহিত্য রচনার চেষ্টা খুবই সহজাত এবং আবেগের দুর্নিবার আকর্ষণ নিজের গভীরে কাজ করে। পাশাপাশি সম্পাদনা ও প্রকাশনার জন্য বিশেষ তাগিদে অনুভব করি। সেই প্রেরণায় ছাইলিপির সম্পাদনার কাজে মনোনিবেশ এবং ছাইলিপির পথচলা। ছাইলিপিতে লিখেছেন, লিখছেন অনেকেই। তাদের প্রতি আমার অশেষ কৃতজ্ঞতা। এই ওয়েবসাইটের প্রতিটি লেখা মূল্যবান। সেই মূল্যবান লেখাকে সংরক্ষণ করতে লেখকদের কাছে আমরা দায়বদ্ধ। কোন লেখার মধ্যে বানান বিভ্রাট থাকলে সেটির জন্য আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করছি। ছাইলিপি সম্পর্কিত যে কোন ধরনের মতামত, সমালোচনা জানাতে পারেন আমাদেরকে । ছাইলিপির সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। ছাইলিপির নতুন সংযোজন ছাইলিপির ইউটিউব চ্যানেল Chailipi Magazine। সাবস্ক্রাইব করার আহ্বান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কপি করা থেকে বিরত থাকুন ! বিশেষ প্রয়োজনে ইমেইল করুন [email protected]