ইউটিউমার
টাইপ- ওয়েবফিল্ম
পরিচালক- আদনান আল রাজীব
ব্যপ্তি- ২ ঘন্টা (প্রায়)
শ্রেষ্ঠাংশে- প্রিতম হাসান, পলাশ, গাউসুল আলম শাওন প্রমুখ
চা খাবেন? না পরের টুকু আর নাই বা বললাম। এই কাঙ্ক্ষিত ডায়লগ থেকে বেরিয়ে এসে আপাতত একটি টিউমারের অপারেশন করা যাক। তবে আমি ডাক্তার না। একজন ছোটখাটো রিভিউয়ার। তাই আপাতত ইউটিউমারের অপারেশনাল রিভিউ লিখি।
যদি প্রথমে বলি ইউটিউমার কি? তাহলে বলবো ইউটিউমার একটি সম্পুর্ণ ভাড়ামো মুক্ত অথবা কিঞ্চিত ভাড়ামো যুক্ত একটি ওয়েবকন্টেন্ট। যেটি ঘুরছে চরকিতে। ইউটিউমার একটি আগুনের গোলা। এই আগুনকে যতই অন্তরে নিবেন সেই আগুনেই পুড়তে হবে আপনাকে৷ অবশ্য সোস্যাল মিডিয়ার ভাইরাল ফাগুনের আগুনেই পুড়ছি আপনি আমি। আরো যোগ করি, এই আগুনের ব্যপ্তি এতই বেশি যে সবাই পুড়ে যাবেন অনায়েসে।
স্যাটাস্যাট স্যাট….! এইবার একটু ইউটিউমারের মূল কন্সেপ্ট নিয়ে আলোচনা করা যাক। ইউটিউমার স্যাটেগার কমেডি ধাচের ওয়েবফিল্ম। যেটির পরিচালনা করেছেন বাংলাদেশের গুণী তরুণ নির্মাতা আদনান আল রাজীব।
ইউটিউমারের মূল যে আকর্ষণের বার বার দেখানো হয়েছিলো সেখান থেকেই পিছু হেটেছে ইউটিউমার।এই পিছু হাটার ভালো দিক হচ্ছে, স্ক্রিন আর চোখ দুটোই শান্তিতে ছিলো।
সুযোগের অভাবে হুযুগে বাঙালি, বানরের খেলা দেখে দেয় হাততালি । বর্তমানে সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল রোগের যে নেশা আমাদেরকে ডুবিয়ে রেখেছে সেই নেশা থেকে বের হওয়ার কোন পথ কিংবা এর গন্তব্য কোথায় সেটি আমাদের জানা নেই। কোন ইস্যূ নিয়ে মাথা ঘামানো সোস্যাল মিডিয়ার তথাকথিত ট্রেন্ডি পিপলরা কাউকে চাইলেই হিরো থেকে জিরো৷ কিংবা জিরো থেকে হিরো বানিয়ে দিতে পারে। ইউটিউমার সে কথাই বলেছে! তবে ভিন্ন আঙ্গিকে! ইউটিউবের মতো ফেসবুকও আমাদের জীবনের কালপ্রিত হয়ে যাচ্ছে কোথাও কোথাও৷ তবে এসব নীতিকথার দায়ভার নিজেকেই নিতে হবে।
আপনি যে গল্পের শেষটা আন্দাজ করতে পারবেন সেই গল্প আপনার না দেখাই ভালো। তবে ইউটিউমারকে কোথাও কোথাও দুর্দান্ত লেভেলের ওয়েব কন্টেন্ট মনে হয়েছে। একইসাথে এর ব্যপ্তি যতই বেড়েছে ততই কমেছে এর স্বাদ। ঠিক ভালো লেগেছে কি না এই কথার সহজ উত্তর না দেওয়াই ভালো।তবে ইউটিউমারের শেষে গিয়ে এভাবে ঘোল খেতে হবে সেটা বোঝার বাহুল্য রাখে না ।
ইউটিউমারের গল্পের সাথে লোকেশন এবং সিনেমাটোগ্রাফি দুর্দান্ত ভাবে মিলেছে৷ সাথে সাথে সেট ডিজাইনিংও ভালো লেগেছে। সব থেকে ভালো লেগেছে ব্যকগ্রাউন্ড মিউজিক আর দুর্দান্ত লেভেলের সিনেমাটোগ্রাফির অসাধারণ কম্বিনেশন। পরিচালক বোধয় এ ক্ষেত্রেই সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।
প্রীতম হাসানের অভিনয় দেখে দিন দিন মুগ্ধ হতে হয়। তিনি গতানুগতিক ধারার এসময়ের অভিনেতাদের মধ্যে আমার সব থেকে প্রিয় একজন। একই ক্ষেত্রে জিয়াউল হক পলাশের অভিনয়ও চনমনে লেগেছে। আবার কখনো কখনো মনে হয়েছে প্রীতম হাসান স্ক্রিণে নিরামিশ হয়ে গেলেও, এই নিরামিশকে আমিষ এনে দিয়েছেন পলাশ। এখানেই তিনি দুর্দান্ত। ইউটিউমারের স্বল্প সময়ে গল্প হওয়া জ্যাকসন ব্রো! (অভিনেতার নাম জানা নেই) জ্যাকসন ব্রো যতক্ষণ স্ক্রিণে ছিলেন তাকে বোরিং লাগেনি। একই ক্ষেত্রে গুণী অভিনেতা গাউসুল আলম শাওনের অভিনয় বরাবরের মতো দারুণ লেগেছে। উনি ওপারের টোনে যে সংলাপ বলেছেন, সেই সংলাপে তাকে ওপারের মানুষ মনে হয়েছে৷ ভালো লেগেছে ইউটিউমারে গাউসুল আলম শাওনের পার্শ্ব অভিনেতাকেও।
ইউটিউবের স্যাটেয়ারে ইউটিউবার না হলে ইউটিউমার জমে কিভাবে? সালমান মুক্তাদির, ইফতেখার রাফসান যতক্ষণ স্ক্রিণে ছিলেন ততক্ষণই ভালো লেগেছে৷ একই সাথে ইউটিউব রোস্টার তাহসিন আল রাকিবও তার সেরা কনট্রিবিউশন দিয়েছেন। তবে এখানেই ফুল স্টপ রাখতে চাই, লাস্ট সিকোয়েন্সের ব্যপারে কথা বলার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি।
জীবন একটা পাগলা ঘোড়া, টগবগাইয়া ছুইট্ট্যা যায়! ইউটিউমারের সব থেকে ইম্প্রেসিভ ছিলো এই গানের সাথে সিনেমাটোগ্রাফির দুর্দান্ত কম্বিনেশন। সত্যি বলতে সোস্যাল মিডিয়ার এই জীবন আসলেই লাগামহীন পাগলা ঘোড়ার মতো। তবে পরিবর্তন আপেক্ষিক ব্যাপার। দিন দিন যতই আমরা আধুনিক কিংবা টগবগে হচ্ছে তত নিচের দিকে তাকালেই অতীতের ভুলগুলো চোখে পড়ছে। আসলেই এটুকু নীতিকথা বলতেই হচ্ছে, ভালো কন্টেন্টকে প্রমোট করলে সমাজ এবং ডন ভাই দুই ব্যাপারটাই ভালো। তবে এভাবে লাগামহীন ভাবে খারাপ কন্টেন্টকে প্রমোট করলে ডন ভাইয়ের জেলে যাবার আগের মতো দৃশ্যের মতো প্রমাণ করে তবেই ফেসে যেতে হবে।
সব মিলিয়ে ইউটিউমার বর্তমান সময়ের সোস্যাল মিডিয়ার ভাইরাল দুনিয়ার অনবদ্য এক স্যাটেয়ার কমেডি প্যাকেজ। তবে প্যাকেজে কি একটা নেই, কি একটা নেই এমন ব্যপারটা খুঁজে বেড়াবে দর্শক। সেই কি ব্যাপারটা খুঁজতে হলে ইউটিউমার দেখার জন্য হাইলি রিকমেন্ডেশন না থাকলেও। দেখতে পারেন ইউটিউমার সত্যিই দুর্দান্ত! সব শেষে ঐ একটা কথাই রইলো, দেশী পন্য দেখে হন ধন্য। আর বর্তমানের হুজুগে সোস্যালিস্ট হওয়া থেকে বিরত থাকতে ইউটিউমার দেখুন, না হলে ক্যান্সার হয়ে যেতে পারে। পৃথিবী সুন্দর হোক!
দ্রষ্টব্য- রিভিউতে কোন বানান কিংবা তথ্যবিভ্রাট থাকলে আন্তরিক ক্ষমাপ্রার্থী। একই সাথে ইউটিউমার প্রসঙ্গে কারো সাথে মতোভিন্নতা সৃষ্টি হলে তার জন্যেও ক্ষমাপ্রার্থী।